ফিলিস্তিনে ইসরায়েলিদের ভয়াবহ হামলা, মদদ যোগাচ্ছে আমেরিকা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৪:২১ PM , আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩, ০৪:২১ PM

অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর এক বড় আকারের সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত ১০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, বলছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। আহতের সংখ্যা ৫০-এরও বেশি।
জেনিনে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর চলমান অভিযানের প্রতিবাদে দখলকৃত পশ্চিমতীরে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম তীরের দোকানপাট ও অফিস বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন ছুটির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই বন্ধ রয়েছে।
প্রায় ১৪,০০০ ফিলিস্তিনির বাসস্থান এই জেনিন ক্যাম্পটির ওপর ব্যাপক ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং এর পর হাজার হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে - যার ফলে এখন রাস্তায় রাস্তায় বন্দুক-যুদ্ধ হচ্ছে।
ফিলিস্তিন রেডক্রসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেনিন শরনার্থী শিবির থেকে এখনো পর্যন্ত তিন হাজার ফিলিস্তিনিকে স্থানীয় হাসপাতালে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকই অসুস্থ এবং প্রবীণ।
ইসরায়েলের ভাষ্য হচ্ছে, এই অভিযানের মাধ্যমে ‘সন্ত্রাসীদের আস্তানা’ নিশানা করা হচ্ছে। তবে ফিলিস্তিনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের নিরস্ত্র মানুষের উপর আবারো নতুন করে যুদ্ধাপরাধ করছে ইসরায়েল।
জাতিসংঘ বলছে, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানের প্রভাব নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। অভিযানের কারণে শরণার্থী শিবিরের বড় এলাকাজুড়ে পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এজন্য যারা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যেতে চাইছে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না বলে জাতিসংঘের বিবৃতিতে বলা হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীদের সাথে ব্যাপক ‘গুলি বিনিময়’ হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে তারা জেনিন এলাকায় 'সন্ত্রাসী অবকাঠামোর' ওপর আঘাত হানছে এবং ২০ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহামেদ শেতায়েহ বলেছেন, ইসরায়েল ক্যাম্পটি ধ্বংস করে এখানকার বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার চেষ্টা করছে।
জেনিনের বৃহৎ শরণার্থী শিবিরটির কেন্দ্রস্থলে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের ওপর ড্রোন হামলা হয়েছে। সেখান থেকে বিবিসির ইয়োলান্দে নেল জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় আক্রমণগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
তিনি জানান, নিয়মিত বিরতিতে জোরালো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আরো শোনা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন ও উড়ন্ত ড্রোনের আওয়াজ।
ইসরায়েলি বাহিনী এ পর্যন্ত সাত জন ফিলিস্তিনি নিহত হবার কথা বলেছে। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন বলেছেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু সাধারণ ফিলিস্তিনিরা নয় বরং জেনিনে এবং শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত জঙ্গি গ্রুপগুলো যারা তার ভাষায় ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে। ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের এক জরুরি বৈঠক ডেকেছেন প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
জেনিনের কিছু রাস্তায় ফিলিস্তিনিরা টায়ার পুড়িয়ে ইসরায়েলি অভিযানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ইসরায়েলি সামরিক জীপের দিকে তরুণ ফিলিস্তিনিরা পাথর ছুঁড়লেই সৈন্যরা পাল্টা গুলি করছে।
ইয়োলান্দে নেল জানাচ্ছেন, প্রচণ্ড বন্দুক যুদ্ধের মধ্যে জেনিন ব্রিগেড নামে একটি ফিলিস্তিনি গ্রুপ জানিয়েছে, তারা তাদের শেষ নিঃশ্বাস ও বুলেট থাকা পর্যন্ত লড়াই করে যাবে। কয়েকটি ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গ্রুপ মিলে এই জেনিন ব্রিগেড গঠিত বলে জানা যায়।
গত এক বছরের মধ্যে জেনিনের শরণার্থী শিবিরের ওপর একাধিক ইসরায়েলি সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে, এবং ইসরায়েলিদের লক্ষ্য করে বেশ কিছু গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। ফিলিস্তিনিদের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার সময় এই এলাকাটিতে ব্যাপক গোলযোগ হয়।
২০০২ সালের এপ্রিলে ইসরায়েলি বাহিনী এখানে এক পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান চালায় যাতে কমপক্ষে ৫২ জন ফিলিস্তিনি এবং এবং ২৩ জন ইসরায়েলি সৈন্য নিহত হয়।
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, বারবার ফিলিস্তিনিদের ওপর নৃশংস হামলা চালানোর পেছনে ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকারকে সক্ষম করে তুলছে এবং উৎসাহ জোগাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অটুট সমর্থন ও সহায়তা।
ইসরায়েলের হাজারো সেনা যখন গতকাল জেনিনের জনবহুল শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালায়, তখন একইসঙ্গে চলে আকাশপথে একের পর এক হামলা, তখন হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সাফাই গাওয়া হয়েছে। জোর দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার’ অধিকার রয়েছে।
এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল বলেছে, ‘হামাস, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ ও অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর তৎপরতার বিপরীতে আমরা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ও নিজেদের জনগণকে রক্ষার অধিকারকে সমর্থন করি।’
সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা