ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দিতে আপত্তি জানাল জার্মানি

ক্লাস্টার বোমা
ক্লাস্টার বোমা  © ডয়চে ভেলে

ইউক্রেনকে ক্লাস্টার বোমা দিতে আপত্তি জানিয়েছে জার্মানি। ক্লাস্টার বা ছররা বোমা ফাটালে একসঙ্গে অনেক মানুষকে আঘাত করা যায়। বোমার ভেতর রাখা অসংখ্য স্পিন্টার চারিদিকে ছড়িয়ে গিয়ে শত্রুকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ইউক্রেনকে এই ধরনের ক্লাস্টার বোমা দিতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু জার্মানি এতে আপত্তি জানিয়েছে।

২০০৮ সালে এই ধরনের অস্ত্র ব্যবহার যাতে না হয়, তার জন্য একটি চুক্তি হয়েছিল। জার্মানি সেই চুক্তির অন্যতম দেশ। চুক্তিতে বলা হয়েছিল, এই ধরনের বোমা বেসামরিক মানুষের ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ, এই বোমা নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করে না। চারিদিকে ছড়িয়ে যায়। ফলে এই বোমা ব্যবহার করলে বহু মানুষ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন এবং সেখানে বেসামরিক মানুষেরাও আক্রান্ত হতে পারেন।

রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু করার পর অভিযোগ উঠেছিল বেশ কিছু জায়গায় রাশিয়ার সেনা ক্লাস্টার বোমা ব্যবহার করেছে। বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এবার সেই ক্লাস্টার বোমা ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

ক্লাস্টার বোমা বিরোধী চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র নেই। ফলে ইউক্রেনকে এই ধরনের বোমা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আইনি সমস্যা নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটোর অংশ। ন্যাটো ইউক্রেনকে কোনো অস্ত্র দিলে সেখানে ন্যাটোর সব দেশের সবুজসংকেত প্রয়োজন। ফলে জার্মানি সমস্যায় পড়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলফ শলৎস অবশ্য বিষয়টি থেকে দূরত্ব তৈরির কৌশল নিয়েছেন। বুধবার বার্লিনে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ক্লাস্টার বোমার পক্ষে সওয়াল করেছে।

জার্মানি যে অবস্থান নিতে চলেছে তা হলো, যুক্তরাষ্ট্র একটি সার্বভৌম দেশ। ইউক্রেনকে ব্যক্তিগতভাবে তারা এই বোমা দিচ্ছে। জার্মানি এই বোমা সমর্থন করে না ঠিকই, কিন্তু তারা নিষেধ করার জায়গাতেও নেই।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনকে কী ধরনের অস্ত্র দেওয়া হবে, তা নিয়েও রীতিমতো সমস্যায় পড়েছিল জার্মানি। প্রাথমিকভাবে জার্মানির অভিমত ছিল কেবলমাত্র রক্ষণাত্মক অস্ত্রই দেওয়া হোক ইউক্রেনকে। পরে অবশ্য তারা আক্রমণাত্মক অস্ত্রও দিয়েছে। এবার ক্লাস্টার বোমা নিয়ে সেই একই সমস্যায় পড়েছে জার্মানি।

ইউক্রেন জানিয়েছে, তাদের অস্ত্র এবং গোলা-বারুদ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রয়োজন মতো অস্ত্রের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র তৈরির সবচেয়ে বড় দেশ। তারাও ইউক্রেনকে অস্ত্র জোগান দিয়ে উঠতে পারছে না। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ক্লাস্টার বোম দিতে চাইছে ইউক্রেনকে। কারণ এই বোমা একসঙ্গে অনেককে ঘায়েল করা যায়। ইউক্রেনও এই বোমা পেতে উৎসাহী।

সাম্প্রতিক ন্যাটোর সম্মেলনে জার্মানি ইউক্রেনের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ইউরোর অস্ত্রের প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেই অস্ত্র কতদিনে দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়াকে পরাস্ত করার জন্য যত দ্রুত সম্ভব তাদের অস্ত্র প্রয়োজন।

ক্লাস্টার বোমা কী?
ক্লাস্টার বা গুচ্ছ বোমার ক্যানিস্টার দশটি থেকে শুরু করে শত শত ছোট বোমা বহন করতে সক্ষম। ক্যানিস্টারগুলো বিমান, আর্টিলারি, নৌ বন্দুক অথবা রকেট লঞ্চার থেকে নিক্ষেপ এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র থেকেও উৎক্ষেপণ করা যেতে পারে।

লক্ষ্যবস্তুর ওপর নির্ভর করে তার ক্যানিস্টারগুলো একটি নির্ধারিত উচ্চতায় খোলে। এরপর ভেতরে থাকা বোমাগুলো নির্দিষ্ট এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। ভূমির কাছাকাছি অথবা ভূমিতেই যেন বিস্ফোরণ ঘটে সে লক্ষ্যে বেমা বিস্ফোরণে টাইমার ব্যবহার করা হয়।

যে ধরনের ক্লাস্টার বোমা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে ডিপিআইসিএমএস নামে পরিচিত ক্লাস্টার বোমার মজুত রয়েছে। ২০১৬ সালে পর্যায়ক্রমে বোমার ব্যবহার বন্ধের পর আর এটি ব্যবহার করা হয় না।

মার্কিন সেনাবাহিনীর ই-আর্মর ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, ডিপিআইসিএমএস ওয়াশিংটন কিয়েভকে যেসব ক্লাস্টার সরবরাহ করছে তার প্রতিটি ক্যানিস্টারে ৮৮টি বোমা রয়েছে, যা ১৫৫ মিমি হাউইটজার থেকে গুলি করতে সক্ষম। প্রতিটি বোমার প্রাণঘাতী পরিসীমা ১০ বর্গমিটার। নিক্ষেপের উচ্চতার উপর নির্ভর করে প্রতিটি  একক ক্যানিস্টার কোনো এলাকার ৩০ হাজার বর্গমিটার (প্রায় ৭.৫ একর) পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে। ১০টির অথবা তার বেশি বোমা একটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস করতে সক্ষম। তবে শুধু একটি ক্লাস্টর বোমা একটি সাঁজোয় যানের অস্ত্র নিস্ক্রিয় অথবা অচল করে দিতে পারে