ভোটের আগে বিজেপি পুরোপুরিভাবে আ.লীগের পাশে আছে

বিজেপি-আ.লীগ
আওয়ামি লীগ প্রতিনিধিদলের নেতা আব্দুর রাজ্জাককে অভ্যর্থনা জানাচ্ছেন বিজেপি সভাপতি।  © ডয়চে ভেলে

বিজেপি সভাপতি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করলেন বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আওয়ামি লীগ প্রতিনিধিদল।

বিজেপি কেমন করে কাজ করে তা দলের জাতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার কাছ থেকে জানলেন আওয়ামি লীগ নেতারা। এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে আছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তাছাড়া আছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মেরিনা জাহান কবিতা এবং সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য আরমা দত্ত।

ভারতের ক্ষমতাসীন দলের এই কর্মসূচির নাম, বিজেপি-কে জানো। এর আগে বিজেপি-র আমন্ত্রণে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরা দিল্লিতে এসে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বিজেপি-কে জেনেছেন। এবার বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের পাঁচ সদস্য জানলেন বিজেপি কীভাবে কাজ করে।

তবে আর কয়েক মাস পরেই বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি-র সদরদফতরে এসে আওয়ামি লীগ নেতাদের নাড্ডার সঙ্গে আলোচনা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে একটা বার্তা স্পষ্ট, ভোটের আগে বিজেপি পুরোপুরি আওয়ামি লীগের পাশে আছে।

সূত্র জানাচ্ছে, বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডা জানিয়েছেন, তাদের সাফল্যের অন্যতম প্রধান কারণ হলো সংগঠন। বিজেপি-র এই সংগঠন একেবারে বুথ পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় স্তর পর্যন্ত ছড়ানো। বিশ্বের বৃহত্তম দল হলো বিজেপি। খাতায় কলমে তাদের সদস্যসংখ্যা ১৮ কোটির বেশি।

তবে সংগঠনের কাজে নিয়োগ করা হয় দলের পুরো সময়ের কর্মীদের। সেই সঙ্গে থাকেন অন্য কর্মীরাও, যারা পুরো সময় দিতে না পারলেও কাজের পাশাপাশি অনেকটা সময় দেন।

বুথের কর্মীদের মধ্যেও ভাগ থাকে। ভোটার তালিকা অনুসারে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়। তালিকায় তিনপাতায় যে ভোটারদের নাম আছে, তাদের জন্য একজন কর্মী দায়িত্বে থাকেন। এদের বলে পান্না প্রমুখ। এই পান্না প্রমুখ থেকে শুরু হয় সংগঠনের কাজ। তারপর বুথের দায়িত্ব, মণ্ডলের দায়িত্ব, এভাবে ক্রমে উপরের দিকে উঠতে থাকে সংগঠন। প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন করে ইনচার্জ থাকেন। দলের বিধায়ক ও সাংসদদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া হয়। এভাবেই সংগঠনকে সক্রিয় করে ভোটে জয়ের পথ প্রশস্থ করে বিজেপি।

সূত্র জানাচ্ছে, দুই দলের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়টিও আলোচনায় খুবই গুরুত্ব পেয়েছে। বিজেপি নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, তারা আওয়ামি লীগের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চান।

বিজেপি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ''আওয়ামি লীগ নেতাদের নাড্ডা বিজেপি-র সাংগঠনিক কাঠামোর বিষয়ে জানিয়েছেন। তিনি বুঝিয়েছেন, বিজেপি কীভাবে তৃণমূল স্তরে কাজ করে। বিজেপির কাজের ধরণ, ভিশন এবং ভারতের উন্নতিতে তাদের অবদানের কথা নাড্ডা তাদের বলেছেন।''

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ''এছাড়া দুই দলের মধ্যে কীভাবে যোগাযোগ বাড়ানো হবে, তানিয়েও আলোচনা হয়েছে।''

ও পি জিন্দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত মনে করেন, ''ভারত বরাবরই শেখ হাসিনার পক্ষে।'' ডয়চে ভেলেকে শ্রীরাধা বলেছেন, ''ভারত মনে করে, শেখ হাসিনা নিরাপত্তার বিষয়টি ভালো বোঝেন। ব্যবস্থা নেন। আর ভারতের অতীত অভিজ্ঞতা হলো, আওয়ামি লীগের বিরোধীরা বা বিএনপি ক্ষমতায় এলে নিরাপত্তার বিষয়টি বুঝবে, কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এই ধারণা থেকেই তারা হাসিনার পাশে থাকে।'' 

প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র মনে করেন, ভারত যে বংলাদেশে আওয়ামি লীগ সরকার চায় এটা তো ওপেন সিক্রেট। ডয়চে ভেলেকে শুভাশিস বলেছেন, ''আওয়ামি লীগ ক্ষমতায় না থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হতে পারে। যেটা ভারত একেবারেই চায় না। তাই আওয়ামি লীগের সঙ্গে বিজেপি যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে চাইবে, ভোটের আগে শেখ হাসিনার দলের পাশে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্যও মনে করেন, ''বাংলাদেশের ভোটের আগে স্পষ্ট বার্তা দিলো বিজেপি।'' ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''বর্তাটা হলো, বিজেপি আওয়ামি লিগের পাশে আছে। শেখ হাসিনাকেই তারা পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায়।''

সূত্র: ডয়চে ভেলে