মুসলিমদের শত শত ভবন গুঁড়িয়ে দিচ্ছে হরিয়ানা সরকার
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৫:০৫ PM , আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২৩, ০৫:০৫ PM

ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর ১২ শতাধিক ভবন গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ভবনের বেশির ভাগের মালিকই মুসলিম বলে জানা গেছে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের।
গত মাসের শেষ দিনে শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর থেকে নুহ জেলার ১১টি শহর ও গ্রামে মোট ১২০৮টি ভবন ভেঙেছে হরিয়ানা সরকার। মোট ৩৭টি সাইটে ৭২.১ একর জমির ওপরে থাকা বসতি ভেঙে ফেলা হয়েছে। আর এর মধ্যে বেশিরভাগ বিল্ডিংয়েই বাস ছিল মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের।
সরকারি তথ্য অনুসারে, ভেঙে ফেলা ভবনগুলো নুহ, নলহার, পুনহানা, টাউরু, নাঙ্গল মুবারকপুর, শাহপুর, আগান, আদবর চক, নলহার রোড, তিরঙ্গা চক এবং নাগিনায়। এই নিয়ে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরের বিশেষ দায়িত্বের কর্মকর্তা (ওএসডি) জওহর যাদব দাবি করেন, ১ আগস্ট স্থানীয় পঞ্চায়েতের সাথে বসে সহিংসতায় যুক্তদের চিহ্নিত করা হয়। এরপরই তাদের ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাদব দাবি করেন যে সমস্ত নিয়ম অনুসরণ করেই ভবনগুলো ভাঙা হয়েছে। এই অভিযানের আগে নাকি তারা আইনি মতামতও নিয়েছিল এবং সমস্ত রেকর্ড পরীক্ষা করেছিল। এদিকে ভেঙে ফেলা ভবনের অনেকগুলোতে থাকত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা।
এর আগে নুহ জেলার এসপি নরেন্দ্র বিজরনিয়া দাবি করেছিলেন, হরিয়ানায় বেআইনিভাবে বসাবসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ৩১ জুলাইয়ের সহিংসতায় যুক্ত ছিল। এই রোহিঙ্গারা পাথর ছুঁড়েছিল বলে অভিযোগ। এই আবহে পুলিশ সুপার জানান, তারা দোষীদের চিহ্নিত করে একটি তালিক বানিয়েছে। এবং প্রমাণের ভিত্তিতে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, অন্তত ১৭ জন রোহিঙ্গা রয়েছে পুলিশের সন্দেহের তালিকায়।
নুহের সহিংসতায় দুই হিন্দু যুবককে বাঁচিয়েছিলেন আনিস নামের এক মুসলিম যুবক। তার বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়েছে হরিয়ানা সরকার। আনিস যে যুবকদের বাঁচিয়েছিলো তাদের সঙ্গে কথা বলেও বাঁচাতে পারেনি তার বাড়ি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই একটি ধর্মীয় মিছিলকে আটকানোর অভিযোগে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয় হরিয়ানার নুহ এবং গুরুগ্রাম জেলায়। হরিয়ানার বজরং দল কর্মী মনু মানেসারকে কেন্দ্র করেই সেখানের নুহ্ এবং গুরুগ্রাম জেলায় সহিংসতা ছড়ায়। গত ফেব্রুয়ারিতে ভিওয়ানিতে দুই মুসলিম যুবককে খুন করার ঘটনায় মনু পলাতক। ওই মনু ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেছিলেন যে এই ধর্মীয় মিছিলে তিনি থাকবেন। এই আবহে গুরুগ্রাম আলওয়ার হাইওয়েতে এই যাত্রা থামান কয়েকজন। এরপরই মিছিলকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি গাড়িকে লক্ষ্য পাথর ছোঁড়া হয়। সেই সময় পাশের এক শিবমন্দির চত্বরে আশ্রয় নেন প্রায় ২৫০০ জন।
সেদিন সন্ধ্যার দিকে গুরুগ্রাম সোহনা হাইওয়েতে সহিংসতা ছড়াতে থাকে। একাধিক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ঘটনার জেরে বেশ কিছু বাড়িঘর, দোকানেও আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ধর্মস্থানেও হামলা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করেও চলে ইট বৃষ্টি। সহিসংতায় দুই হোমগার্ডসহ অন্তত তিনজনের মৃত্যু ঘটেছে। মৃত হোমগার্ডদের নাম- নীরজ এবং গুরুসেবক। ঘটনায় জখম আরো অন্তত ২০০ জন। পরে অন্যত্র সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। রাতে সেক্টর ৫৭-এর মসজিদে হামলা হয়েছিল। আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল মসজিটিতে। সেখানে চালানো হয়েছিল গুলি। তাতে মৃত্যু হয়েছিল এক ইমামের। জখম হয়েছিলেন আরো তিনজন।