ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার আগে কেমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিলো উপনিবেশবাদীরা?

ইসরায়েল
ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময়  © ফাইল ছবি

উপবনিবেশবাদীরা ইহুদিবাদী ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পটভূমি তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের ইন্সটিটিউট ফর হিউম্যানিটিস অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজের চেয়ারম্যান ড. মুসা নাজাফি।

তিনি এক সাক্ষাতকারে বলেছেন,  উসমানীয় সামাজ্যের পতনের ফলে উপনিবেশবাদীদের কাজ সহজ হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য ও জার্মানি এক পক্ষে ছিল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাদের পরাজয় এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের অতীতের কিছু সমস্যার কারণে তারা নিজেদের অধীনে থাকা অঞ্চলগুলোকে আর রক্ষা করতে পারেনি। উসমানীয় সাম্রাজ্য ভাঙার পেছনে বিজাতীয়দের উসকানিও কাজ করেছে। এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য যে কাজটা উপনিবেশবাদীরা করেছে তা-হলো উসমানীয় অঞ্চলের আরব ও তুর্কিদের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে দেওয়া। কিছু আরবকে তারা উসকানি দিত। এই গৃহযুদ্ধে উসমানীয়রা আরব জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

ড- মুসা নাজাফি (ছবি সংগৃহীত)  

তিনি বলেন, অবশ্য খোদ উসমানীয়দেরও দোষ ছিল। তারা বলদর্পি ছিল, জোর-জবরদস্তি করত। সব সময় ভেতরের পরিস্থিতির কারণে বাইরের শক্তি লাভবান হয়, পরিস্থিতিকে অপব্যবহার করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দলিল-প্রমাণ থেকে এটা স্পষ্ট যে, এই উসকানিতে বিদেশিদের হাত ছিল। যেসব দেশ বিচ্ছিন্ন হয়েছে, উসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে আলাদা হয়েছে, তারা বাহ্যত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সামনে রেখে স্বাধীনতা চাচ্ছিল। যেমন- মিসর, জর্দান, সিরিয়া, ইরাক ও লেবানন। 

ড. মুসা বলেন, এই বিচ্ছিন্নতা ছিল বিস্ময়কর অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া দেশগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে উপনিবেশবাদীরা। তারা বলে দিয়েছে কোন দেশের ভূখণ্ড কোন পর্যন্ত হবে। এই যে বলা হয়, এটা পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং এটা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এটা ঠিকই বলা হয়। অর্থাৎ কেউ উসমানীয় সরকার, জনগণ ও জাতীয় আন্দোলনগুলোর মতামত নেয়নি। যখনি এসব দেশের ওপর থেকে উসমানীয়দের সমর্থন উঠে গেল অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল তখন জাতীয়তাবাদও নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে সক্ষম হয়নি।

ড. নাজাফি বলেছেন, উপনিবেশবাদী শক্তিগুলোর কাছে বিভিন্ন জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো মূল্য নেই। তারা নিজেদের স্বার্থে কাজ করে। এ কারণে জর্ডান, সৌদি আরব ও এরপর ইরাকে যেসব পরিবারকে ক্ষমতায় বসানো হয়েছিল এবং এসব পরিবারের বিরুদ্ধে একের পর এক যেসব সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল সেই ইতিহাস খুবই দুঃখজনক। এসব ঘটনা ঐসব দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে পুরোপুরি কেড়ে নিয়েছিল। 

ড. বলেন, এই অনিরাপত্তা ও বিরোধের মধ্য থেকেই ইসরাইলের উৎপত্তি ঘটে। যখন পুরো চিত্রটার দিকে তাকানো হয় তখন এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এসব ঘটতে হতো যাতে এখান থেকে ইহুদি ও আন্তর্জাতিক জায়নিজমের জন্য একটা কিছু বেরিয়ে আসতে পারে। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে এবং এই কাহিনী তিক্ততায় ভরা। নিশ্চিতভাবেই সব সময় ব্রিটেনের সম্পৃক্ততা অন্য দেশগুলোর চেয়ে বেশি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্থান দখল করে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ