মরক্কোয় ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২৫০০, যে গ্রামে কেউ সুস্থ্য নেই

মরক্কো
মরক্কোর ভয়াবহ ভূমিকম্পের কিছু দৃশ্য  © বিবিসি ও ইউরো নিউজ

মরক্কোয় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আড়াই হাজারে পৌঁছালো। ভূমিকম্পের ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো উদ্ধারকাজ শেষ হয়নি। এই অভিযানে যোগ দিয়েছেন স্পেন, যুক্তরাজ্য ও কাতারের উদ্ধারকর্মীরা।

গত শুক্রবার মাঝরাতে (স্থানীয় সময় ১১টা ১১ মিনিট) শক্তিশালী ভূমিকম্প মরক্কোতে আঘাত হানে। মরক্কোতে এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প ছিল এটি। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৮। শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে মারাকেশসহ মরক্কোর বিস্তীর্ণ জনপদ একরকম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আজ সোমবার মরক্কোর রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, ২ হাজার ৪৯৭ জনের নিহত ও ২ হাজার ৪৬৭ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, বিবিসি, এনবিসি নিউজের খবরে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৫০০ জনে পৌঁছেছে বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে মরক্কোয় ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ এক চিত্র উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হচ্ছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পে কয়েকটি গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে। তেমনই একটি গ্রাম তাফেগাঘতে। গ্রামটির পরিস্থিতি দেখতে বিবিসির প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়েছিলেন। শুরুতে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় পথে যাঁর সঙ্গেই দেখা হচ্ছিল, তাঁর কাছ থেকেই ভূমিকম্প পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গ্রামটির বাসিন্দারা হয় হাসপাতালে, নয়তো মৃত।

আরও পড়ুন:- মরক্কোর ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কাঁদছেন নোরা, করছেন প্রার্থনা

গ্রামে পৌঁছেই সে কথার আলামত মিলল। চারপাশে ধ্বংসাবশেষ দেখে বোঝা যায়, কেন এখানে কেউই অক্ষত থাকতে পারেনি। গ্রামের বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়িগুলো ইট ও পাথর দিয়ে এমনভাবে তৈরি যে এগুলো শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার উপযোগী নয়।

ভূমিকম্পে গ্রামটির ২০০ বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ। হাসান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর চাচা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। তাঁকে বের করতে পারার মতো কোনো আশা দেখছেন না।

স্থানীয় এই বাসিন্দা আরও বলেন, তাঁর চাচাকে বের করার মতো যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেগুলো এই গ্রামে নেই। বাইরে থেকেও কোনো বিশেষজ্ঞ সেখানে পৌঁছাননি।

হাসান মনে করেন, জনগণকে সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছাতেই এসব হয়েছে, সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আমাদের এখন সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা দেরি করে ফেলেছে। জনগণকে সহযোগিতা দিতে আসতে তারা দেরি করছে।’

এই ব্যক্তি বলেন, মরক্কো কর্তৃপক্ষের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ করা।

আবদু রহমান হাতের ইশারায় একটি ধ্বংসস্তূপ দেখান। তিনি বলেন, ‘ওখানে আমাদের বাড়ি ছিল। আপনি ওখানে সাদা কম্বল আর আসবাবও দেখতে পাবেন। এখন সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।’

স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়েছেন আবদু রহমান। তিনি বলেন, ‘গতকাল তাদের কবর দিয়েছি। আমরা তাদের সবাইকে একসঙ্গে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় পেয়েছি।’

সূত্র: বিবিসি, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, এবিসি


মন্তব্য