মরক্কোয় ভূমিকম্পে যে গ্রামের কেউ সুস্থ্য নেই

মরক্কো
  © গার্ডিয়ান

মরক্কোয় ভূমিকম্পের পর ভয়াবহ এক চিত্র উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। এতে বলা হচ্ছে, শক্তিশালী ভূমিকম্পে কয়েকটি গ্রাম তছনছ হয়ে গেছে। তেমনই একটি গ্রাম তাফেগাঘতে। গ্রামটির পরিস্থিতি দেখতে বিবিসির প্রতিনিধিরা সেখানে গিয়েছিলেন। শুরুতে পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে গ্রামের দিকে যাওয়ার সময় পথে যাঁর সঙ্গেই দেখা হচ্ছিল, তাঁর কাছ থেকেই ভূমিকম্প পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এসব প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, গ্রামটির বাসিন্দারা হয় হাসপাতালে, নয়তো মৃত।

গ্রামে পৌঁছেই সে কথার আলামত মিলল। চারপাশে ধ্বংসাবশেষ দেখে বোঝা যায়, কেন এখানে কেউই অক্ষত থাকতে পারেনি। গ্রামের বাসিন্দাদের ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়িগুলো ইট ও পাথর দিয়ে এমনভাবে তৈরি যে এগুলো শক্তিশালী মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার উপযোগী নয়।

আরও পড়ুন:- মরক্কোতে ভয়াবহ ভূমিকম্প: নিহত বেড়ে প্রায় ২৯০০

ভূমিকম্পে গ্রামটির ২০০ বাসিন্দার মধ্যে ৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও অনেকে নিখোঁজ। হাসান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, তাঁর চাচা এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। তাঁকে বের করতে পারার মতো কোনো আশা দেখছেন না।

স্থানীয় এই বাসিন্দা আরও বলেন, তাঁর চাচাকে বের করার মতো যেসব সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেগুলো এই গ্রামে নেই। বাইরে থেকেও কোনো বিশেষজ্ঞ সেখানে পৌঁছাননি।

হাসান মনে করেন, জনগণকে সহযোগিতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ইচ্ছাতেই এসব হয়েছে, সবকিছুর জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। তবে আমাদের এখন সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। তারা দেরি করে ফেলেছে। জনগণকে সহযোগিতা দিতে আসতে তারা দেরি করছে।’

আরও পড়ুন:- রোনালদোর হোটেল উদ্বাস্তুদের আশ্রয়স্থল নয়: গুজবের পর হোটেল কর্তৃপক্ষ

এই ব্যক্তি বলেন, মরক্কো কর্তৃপক্ষের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সব সহযোগিতার প্রস্তাব গ্রহণ করা।

আবদু রহমান হাতের ইশারায় একটি ধ্বংসস্তূপ দেখান। তিনি বলেন, ‘ওখানে আমাদের বাড়ি ছিল। আপনি ওখানে সাদা কম্বল আর আসবাবও দেখতে পাবেন। এখন সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।’

স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়েছেন আবদু রহমান। তিনি বলেন, ‘গতকাল তাদের কবর দিয়েছি। আমরা তাদের সবাইকে একসঙ্গে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় পেয়েছি।’

 সংবাদ সংস্থা গার্ডিয়ান কয়েকটি পাহাড়ী এলাকা পরিদর্শন করেছে, যেগুলি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা বলেছে যে তারা অনুভব করেছে যে তারা পরিত্যক্ত হয়েছে।

গার্ডিয়ান জানায়, তাফেঘাঘ গ্রামের দৃশ্য মর্মান্তিক ছিল। বাসিন্দারা বলেছেন যে এখানে ৯০ জন মারা গেছে। প্রায় ৪০০ জনের একটি গ্রামে যা বহু শতাব্দী ধরে বিদ্যমান।

মৃতদেহ খুঁড়ে বের করার সময়, প্রাণীদের অবশিষ্টাংশ এখনও ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে রয়েছে, যার ফলে জায়গাটিতে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

গার্ডিয়ান তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। সেখানে প্রায় প্রত্যেক ব্যক্তি ভয়ঙ্কর ক্ষতির গল্প বলেছিল।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবারে শুরু হওয়া মরক্কোর ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছে বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ