কানাডীয়দের ভিসা দেওয়া স্থগিত করলো ভারত

ভারত-কানাডা
  © ফাইল ছবি

কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা সেবা স্থগিত করেছে ভারত—আজ বৃহস্পতিবার ভিসা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিএলএসের এমন ঘোষণার কিছুক্ষণ পরই তারা ওয়েবসাইট থেকে তথ্যটি সরিয়ে নেয়। তবে এর কিছুক্ষণ পর আবারও  ওয়েবসাইটে সেই ঘোষণা ফিরে আসে।

আজ বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্স বিএলএসের ওয়েবসাইটে শুরুতে এমন ঘোষণা দিয়ে মাঝে তা সরিয়ে নিয়ে আবার সেই ঘোষণায় ফিরে আসার কথা জানায়।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় মিশনের কাছ থেকে পাওয়া নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল তাদের ওয়েবসাইটে আজ বৃহস্পতিবার থেকে এই সেবা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছিল।

আরও পড়ুন:- ভারত-কানাডার সম্পর্কের টানাপোড়েন, একে অপরের কূটনীতিককে বহিষ্কার

সে সময় বিএলএস ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছিল, ভারতীয় মিশনের কাছ থেকে পাওয়া নোটিশে 'কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত' কারণে 'পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত' ভিসা সেবা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খালিস্তানি নেতা হরদিপ সিং (সংগৃহীত)

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলেও কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি।

ইতোমধ্যে ভারতে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশন জানিয়েছে, তারা দেশটিতে সাময়িকভাবে কর্মীর সংখ্যা 'সমন্বয়' করবে। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির জের ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকজন ভারতীয় কূটনীতিককে হুমকি দেওয়া হলে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছে হাইকমিশন।

কানাডার হাইকমিশন এক বিবৃতিতে জানায়, 'সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আমাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিচ্ছি'।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'একাধিক সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে আমাদের কয়েকজন কূটনীতিক হুমকি পেয়েছেন। যার ফলে কানাডা ভারতে কর্মীর সংখ্যা পুনর্বিবেচনা করছে'।

আরও পড়ুন:- ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে সৌদি, যা জানালেন যুবরাজ

সতর্কতার অংশ হিসেবে আমরা সাময়িকভাবে ভারতে কর্মীর সংখ্যা সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি', যোগ করে গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা। কানাডা সরকারের এই বিভাগ অটোয়ার কূটনীতিক ও কনস্যুলার সম্পর্কের দেখভাল করে।

'আমরা আশা করবো ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ভারত আমাদের কূটনীতিক ও দূতাবাসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। যেমনটা আমরাও করে থাকি', যোগ করে বিভাগটি।

বেশ কিছুদিন ধরে ভারত-কানাডার সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। সম্প্রতি জি-২০ সম্মেলনে ট্রুডো-মোদির দ্বিপাক্ষিক আলোচনা বাতিল, শুল্কমুক্ত বাণিজ্য আলোচনা স্থগিতসহ দুই দেশের সম্পর্কের এই বিষয়টির ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

এরই মাঝে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার জানান, জুনে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় শিখ সম্প্রদায়ের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে খুনের ঘটনার সঙ্গে ভারতীয় এজেন্টদের যুক্ত থাকার বিষয়ে তার সরকারের কাছে 'বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ' আছে।

কানাডার অভিযোগের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, 'কানাডার কোনো সহিংস ঘটনায় ভারত সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।'

সুখদুল সিং দুনেক (সংগৃহীত)

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে ট্রুডো এসব অভিযোগের কথা জানালে তিনি এটি 'সম্পূর্ণ অস্বীকার' করেন।

মন্ত্রণালয় জানায় 'আমরা কানাডা সরকারকে তাদের ভূখণ্ডে সব ধরনের ভারত-বিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর আইনি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

আরও পড়ুন:- যৌন নির্যাতনের শিকার পুরুষদের জন্য হটলাইন চালু করছে জাপান

এদিকে ভারত-কানাডার এই সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝে আরও এক শিখ নেতা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

কানাডার উইনিপেগে গতকাল বুধবার রাতে দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে সহিংসতা চলাকালে গুলিতে তিনি খুন হন বলে এনডিটিভির খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনেক কানাডায় খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা এনআইএর গতকাল বুধবার প্রকাশিত তালিকায় দুনেককে ‘এ ক্যাটাগরির’ সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পাঞ্জাবের মোগা থেকে ২০১৭ সালে কানাডায় পালিয়ে যান। ভারতের দাবি, তিনি ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে কানাডায় গেছেন। তিনি ভারতের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আর্শদীপ দালার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে দাবি করা হয়েছে।

দুনেক খুন হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, সরকারের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে, গত জুনে কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্ট জড়িত।

অবশ্য ভারত সরকার খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিংকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী মনে করে।