শিখ নেতা হত্যায় ভারতের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে: কানাডা

ভারত-কানাডা
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো  © ওয়াশিংটন পোস্ট (ফাইল ছবি)

শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ভারতীয় কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছে কানাডা। গোপন সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচারমাধ্যম সিবিসি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। 

কানাডা সরকারের ওই সূত্র জানিয়েছে, কানাডায় উপস্থিত কয়েকজন কূটনীতিবিদসহ ভারতের কর্মকর্তাদের মধ্যে সাংকেতিক গোয়েন্দা যোগাযোগের আলামত সংগ্রহ করেছেন গোয়েন্দারা। এসব আলামত কানাডা একা সংগ্রহ করেনি। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের নিয়ে গঠিত জোট ফাইভ আই’স ইন্টেলিজেন্স সহায়তা করেছে। 

সূত্রটি সিবিসিকে জানিয়েছে, কানাডায় ভারতের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা হরদীপ সিংয়ের হত্যাকাণ্ডের ভারত সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি ‘অস্বীকার করেননি’।

আরও পড়ুন:- ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ অধিকার ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি হবে না: জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট

উল্লেখ্য, গত জুন মাসে কানাডার একটি শিখ মন্দিরের সামনে খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারকে (৪৫) হত্যা করা হয়। খালিস্তানপন্থী শিখ আন্দোলনের এই নেতাকে হত্যার জের ধরে সম্প্রতি কানাডা-ভারত সম্পর্ক বৈরী হয়ে পড়েছে।

কানাডা সরকার বারবার দাবি করেছে, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন জড়িত এবং এ বিষয়ে তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। হত্যাকাণ্ডের জন্য সরাসরি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এরপর ভারতীয় গোয়েন্দা স্টেশনের প্রধানকে বহিষ্কার করে অটোয়া।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ট্রুডোর অভিযোগকে ‘অযৌক্তিক’ আখ্যা দেয় এবং ইটের বদলে পাটকেল হিসেবে কানাডার কূটনীতিক বহিষ্কার করে দিল্লি। জবাবে কানাডা সরকার বলেছে, প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সময় এসব তথ্য-প্রমাণ সামনে আনা হবে।

আরও পড়ুন:- জাতিসংঘে কোরআন অবমাননার নিন্দা জানালেন মুসলিম নেতারা

এদিকে কানাডার অভিযোগের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, 'কানাডার কোনো সহিংস ঘটনায় ভারত সরকারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।'

দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে ট্রুডো এসব অভিযোগের কথা জানালে তিনি এটি 'সম্পূর্ণ অস্বীকার' করেন।

মন্ত্রণালয় জানায় 'আমরা কানাডা সরকারকে তাদের ভূখণ্ডে সব ধরনের ভারত-বিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দ্রুত ও কার্যকর আইনি উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

এদিকে ভারত-কানাডার এই সম্পর্কের টানাপোড়েনের মাঝে আরও এক শিখ নেতা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

কানাডার উইনিপেগে গতকাল বুধবার রাতে দুই দল সন্ত্রাসীর মধ্যে সহিংসতা চলাকালে গুলিতে তিনি খুন হন বলে এনডিটিভির খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। দুনেক কানাডায় খালিস্তান আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

আরও পড়ুন:- ভারতকে যত টাকা কেজি দরে ইলিশ দিলো বাংলাদেশ

ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী সংস্থা এনআইএর গতকাল বুধবার প্রকাশিত তালিকায় দুনেককে ‘এ ক্যাটাগরির’ সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি পাঞ্জাবের মোগা থেকে ২০১৭ সালে কানাডায় পালিয়ে যান। ভারতের দাবি, তিনি ভুয়া পাসপোর্ট ব্যবহার করে কানাডায় গেছেন। তিনি ভারতের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আর্শদীপ দালার ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে দাবি করা হয়েছে।

দুনেক খুন হওয়ার পর ভারতের সঙ্গে কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গত সোমবার কানাডার পার্লামেন্টে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেন, সরকারের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’ রয়েছে, গত জুনে কানাডার নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যার সঙ্গে ভারত সরকারের এজেন্ট জড়িত।

অবশ্য ভারত সরকার খালিস্তান আন্দোলনের নেতা হরদীপ সিংকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী মনে করে। তবে এসব ঘটনায় কানাডা-ভারত সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন।