কানাডা এখন খুনিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে: মোমেন
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:১৮ PM , আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:১৮ PM

ভারতের শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার পর ভারতের সঙ্গে কূটনীতিক টানাপোড়েন চলছে কানাডার। এর বহু আগে থেকেই কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীও। এমন পরিস্থিতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, খুনীদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে কানাডা।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কানাডা খুনিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হওয়া উচিত না। খুনিরা কানাডায় গিয়ে আশ্রয় নিতে পারে এবং সেখানে তারা সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে। অথচ তারা যাদের হত্যা করেছে, তাদের স্বজনরা কষ্ট পাচ্ছে।’
সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুর খুনির মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি বিশদভাবে বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিচার বিভাগ খুবই স্বাধীন এবং সরকার এতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তবে, নূর চৌধুরীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সুযোগ রয়েছে। তিনি যদি বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তাহলে নূর চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের প্রাণভিক্ষার আবেদন মঞ্জুর করে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজাও মঞ্জুর করতে পারেন।’
আরও পড়ুন:- ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটামের ৭২ ঘণ্টা পার হয়ে গেছে, সেমিফাইনালে আপনারা পরাজিত: তথ্যমন্ত্রী
মানবাধিকারের নাম ভাঙিয়ে খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করার প্রসঙ্গে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোমেন বলেন, ‘অনেক সময় অনেকের মাধ্যমেই মানবাধিকারের ধারণার অপব্যবহার করা হচ্ছে। এটি সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। কারণ অনেক সময় খুনি এবং সন্ত্রাসীদের রক্ষা করার জন্য কিছু লোক অজুহাত হিসেবে মানবাধিকারের অজুহাত দেয়।’
ইন্ডিয়া টুডের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পালিয়ে আসা দুই ব্যক্তি হলেন নূর চৌধুরী ও রশিদ চৌধুরী। একজন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে গেছে অন্যজন কানাডায়। নূর চৌধুরীর বয়স এখন ৭০। ২০১৯ সালের দিকে কিছু কথোপকথনের পরিপ্রেক্ষিতে আশা ছিল যে, কিছু সমাধান হয়তো বের হতে পারে। আসলে তা ঘটেনি। আপনি কি মনে করেন যে, মৃত্যুদণ্ডই একমাত্র কারণ যার কারণে নূর চৌধুরীকে কানাডা প্রত্যর্পণ করছে না, নাকি ভারত বা বাংলাদেশ যেই হোক না কেন কানাডার মধ্যে অনীহা রয়েছে এসব লোকদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে?
আরও পড়ুন:- যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি নিষেধাজ্ঞার জন্য বিএনপি দায়ী: হানিফ
উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের খুব ভালো সম্পর্ক এবং কানাডার সঙ্গেও আমাদের ভালো সম্পর্ক। দুই দেশই বন্ধু। আমি ভারত এবং কানাডার মধ্যে এই সমস্যাটির বিশদ বিবরণ জানি না। তবে কানাডার সঙ্গে আমাদের সমস্যার বিষয়ে আমি জানি।
তিনি বলেন, কানাডার সমস্যা হলো তাদের একের পর এক অজুহাত রয়েছে এবং সেটাই বোধগম্য নয়। তাদের আইন আছে, কিন্তু আইন অবশ্যই একজন খুনিকে রক্ষা করবে না। আইন অবশ্যই এ খারাপ লোকদের রক্ষা করবে না; কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কানাডা করছে।
তিনি আরও বলেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, ১৯৭৫ সালে যখন আমাদের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল তখন আমাদের একের পর এক সামরিক সরকার ছিল এবং সেই সামরিক সরকারগুলো এই খুনিদের শুধু পুরস্কৃত করেনি, তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ মিশনে এবং ভালো চাকরিতে দাখিল করেছিল। সামরিক সরকার একটি আইন পাশ করেছে যে, আপনি খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন না, তাই পরিবারের সদস্যরা খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না। পরিবারের সদস্যদের, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে সেই শাসন পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতায় আসতে প্রায় ২১ বছর ধরে লড়াই করতে হয়েছিল। আমরা সেই লোকদের বিরুদ্ধে আদালতে যথাযথ প্রক্রিয়া শুরু করেছি যারা আমাদের জাতির পিতার খুনি এবং বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত দ্বারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছে।
আমরা কানাডিয়ান সরকারের কাছে সমস্ত বিবরণ জমা দিয়েছি যে, প্রক্রিয়াটি ন্যায্য, ন্যায়পরায়ণ ছিল এবং এটি সমস্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যবশত এই খুনিরা কানাডায় আশ্রয় নিয়েছিল। নূর চৌধুরী এবং রশিদ চৌধুরী এই দুই খুনি কানাডায় ভালো জীবনযাপন করছে, যদিও ভুক্তভোগীদের পরিবার এখনো কষ্ট পাচ্ছে।