আমরা কখনই গাজায় নিরপরাধ মানুষদের নির্বিচারে হত্যাকে মেনে নেব না: এরদোগান

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন
ইসরায়েলের দখলদারিতার মানচিত্র হাতে এরদোগান  © ফাইল ছবি

গত শনিবার ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর পাল্টা হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। তাদের বর্বর হামলায় রেহাই পাচ্ছে না স্কুল, মসজিদ, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় কিছুই। হামাস-ইসরায়েলের এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে এখন পর্যন্ত ২৫০০ এর উপরে মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ইসরায়েলের নিহত হয়েছে ১২০০ জন, ফিলিস্তিনের ১৩৫৫ জন। দুই পক্ষের এই হামলা-পাল্টা হামলায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তুর্কিয়ে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রকাশ্যে ইসরাইলি ভূখণ্ডে বেসামরিক নাগরিক হত্যার বিরোধিতা করি। একইভাবে আমরা কখনই গাজায় নিরপরাধ মানুষদের নির্বিচারে হত্যাকে মেনে নেব না। 

গতকাল বুধবার (১১ অক্টোবর) তুরস্কের পার্লামেন্টে জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান।

ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের লাশ (আল জাজিরা)

তুর্কি নেতা গাজার বেসামরিক নাগরিকদের উপর নির্বিচারে হামলাকে একটি ‘গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং সতর্ক করেছেন, ‘গাজায় এমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ হামলা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখে ইসরাইলকে একটি অপ্রত্যাশিত অবস্থানে ঠেলে দিতে পারে৷ বেসামরিক বসতিতে বোমাবর্ষণ করা, এই অঞ্চলে মানবিক সহায়তা নিয়ে আসা যানবাহনকে অবরুদ্ধ করা এবং এই সমস্ত কিছুকে একটি দক্ষতা হিসেবে উপস্থাপন করা শুধু একটি গোষ্ঠীর প্রতিফলন হতে পারে, কোনো রাষ্ট্রের নয়।’

আরও পড়ুন:- ফিলিস্তিনের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে যা বললেন পুতিন

ফিলিস্তিনের পক্ষে তার অটল সমর্থনের পাশাপাশি এরদোগান, ‘দ্য ওয়ার্ল্ড ইজ গ্রেটার দ্যান ফাইভ’ (জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য, যাদের হাতে গোটা দুনিয়ার ভাগ্য নির্ধারিত) এর ব্যানারে কাজ করছেন এবং তিনি ইসরাইলের সংঘটিত অন্যায়ের অটল সমালোচক হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। একই সঙ্গে ইসরাইলসহ আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোর সাথে তুরস্কের সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের মাধ্যমে দেশটি একটি সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

এরদোগান আরও বলেছেন, তুরস্ক হিসেবে আমরা বিবাদমান গ্রুপগুলোকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানাই। আমরা চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই অঞ্চলে যুদ্ধ বন্ধ হোক এবং গ্রুপগুলোর মধ্যে সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হোক।’

এ ছাড়া এরদোগান এবং তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান উভয়েই উত্তেজনা কমানোর জন্য ‘শাটল ডিপ্লোমেসি’ (নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিবাদমান পক্ষগুলোর মধ্যে কূটনীতি করা) চালিয়ে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন:- ইসরায়েলে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পৌঁছানোর পর হামাসের রকেট হামলা

‘আমরা চাই না গাজা, ইসরাইল, সিরিয়া বা ইউক্রেনে শিশু, বেসামরিক মানুষ এবং নিরপরাধ মানুষ মারা যাক এবং আমরা আরও রক্তপাত চাই না,’ জোর দিয়ে বলেছেন এরদোগান। 

সংযমের আহ্বান জানিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। আরও রক্তপাত বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি একটি গঠনমূলক মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তুরস্কের ভূমিকার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ইউক্রেনে একটি শস্য চুক্তির অর্জনের মাধ্যমে সংঘাতে অবিরাম প্রচেষ্টার আন্তরিকতা কার্যকরভাবে প্রমাণ করেছে।

তুরস্ক ফিলিস্তিনের বিষয়ে তার অবস্থানকে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। আঙ্কারার এই অবস্থান তার পশ্চিমা মিত্রদের থেকে প্রস্থান- যারা ইসরাইলকে তার অবৈধ দখল ও সহিংসতা সত্ত্বেও সমর্থন করে। তুরস্ক ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করে, ১৯৬৭ সালের সীমানার উপর ভিত্তি করে যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে ধারাবাহিকভাবে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।

আরও পড়ুন:- ইরানকে হুমকি দিয়ে যা বললো বাইডেন

বর্তমান অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বেসামরিক লোক হতাহতের সংখ্যা হ্রাস করা এবং আঞ্চলিক দেশগুলোতে সংঘাতের বিস্তার রোধ করা আঙ্কারার জন্য সর্বাধিক উদ্বেগের বিষয়। এরদোগান ও হাকান ফিদান উত্তেজনা প্রশমন ও মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে তুরস্কের মুখ্য ভূমিকার উপর জোর দিয়ে শাটল কূটনীতিতে জড়িত। 

প্রেসিডেন্ট এরদোগানের নেতৃত্বে তুর্কি কর্মকর্তাদের তীব্র প্রচেষ্টা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার উত্তেজনাকে লেবানন ও ইরানে ছড়ানো প্রতিরোধ করার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে যে, এই উচ্চতর অস্থিরতার সময়ে এটি একটি অপরিহার্য উদ্যোগ।

সূত্র: আল জাজিরা ও ডেইলি সাবাহ পত্রিকায় প্রকাশিত মেহমেত সেলিকের কলামের সংক্ষেপিত অনুবাদ