ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ক্ষমা চেয়ে দেশ ছাড়তে বললেন কলম্বিয়া সরকার
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০২:২৬ PM , আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ০২:২৬ PM

হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে হামাসকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি বলে মন্তব্য করেছিলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। তবে সেই মন্তব্যকে তামাশার পাত্র বানিয়ে উড়িয়ে দেন বোগোটায় নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত গালি দাগান। প্রতিক্রিয়ায় গালি দাগানকে ক্ষমা চেয়ে দেশ ছাড়তে বলেছে কলম্বিয়া সরকার।
রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলভারো লেভা গত সোমবার ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে ক্ষমা চেয়ে কলম্বিয়া ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সম্মানের খাতিরে আমরা রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করব না, কিন্তু কূটনৈতিক প্রথা বলে যেকোনো দেশের প্রেসিডেন্টকে সেই দেশে নিযুক্ত অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতের সম্মান করা উচিত।
এর আগে গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো দাবি করেন, হামাস ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সৃষ্টি। পেত্রোর টুইটের জবাবে গালি দাগান মজা করে লেখেন, ‘হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনার জ্ঞাতার্থে আমি আরও কিছু তথ্য আমাদের সেরা গোয়েন্দা সংস্থার বরাত দিয়ে জানাতে চাই—আমাদের পূর্বপুরুষেরা গালফ ক্ল্যান (গালফ ক্ল্যান কলম্বিয়ার সবচেয়ে বড় মাদক ব্যবসায়ী গোষ্ঠী) সৃষ্টি করেছিল।’
আরও পড়ুন:- গাজার হাসপাতালে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, একসঙ্গে ৫০০ মানুষের মৃত্যু
গালি দাগান মজা করে আরও বলেন, ‘এখনো গালফ ক্ল্যানে নাক বড় বড় বিপুল পরিমাণ ইহুদি রয়ে গেছে, যারা দলটিকে—গাইতানিস্তা সেলফ ডিফেন্স ফোর্সেস (গালফ ক্ল্যানের আরেক নাম)—পরিচালনা করছে।’ কিন্তু বিষয়টি মোটেও পছন্দ হয়নি বোগোটার। তাই কূটনৈতিক ভব্যতা বজায় রেখে গালি দাগানকে ক্ষমা চেয়ে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গাজার উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পেত্রো লিখেছিলেন, তিনি ছোটবেলা থেকেই গাজার সংঘাতের বিষয়ে অবগত এবং তিনি জানেন ফিলিস্তিনিরা কী পরিমাণ যন্ত্রণা ও অন্যায়-অবিচারের শিকার হচ্ছে। ওই টুইটে তিনি আরও লেখেন, ‘বর্তমানে নব্য নাৎসিরা ফিলিস্তিনি জনগণ, তাদের স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি ধ্বংস করতে চায়।’
এদিকে গত ৯ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের পূর্ণাঙ্গ অবরোধ আরোপের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে পেত্রো বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সমাজ কখনোই এমন নাৎসিবাদী আচরণ মেনে নিতে পারে না এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নাৎসিবাদের পুনরুত্থান গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ এ সময় তিনি জানান, তিনি সব সময়ই সেই সব ঘৃণাবাদী মতবাদ প্রত্যাখ্যান করেন, যা আরেকটি ‘হলোকাস্টের’ সৃষ্টি করতে পারে।
আরও পড়ুন:- বাইডেনের সাথে বৈঠক বাতিল করেছেন আরব নেতারা
ফিলিস্তিনির অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি হাসপাতালে ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ওই এক হামলায় একসঙ্গে ৫০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (১৬ অক্টোবর) আল-আহলিল আরব নামের একটি হাসপাতালে এ হামলা চালায় ইসরায়েল।
হাসপাতালটিতে অসংখ্য আহত ও অসুস্থ মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এছাড়া দখলদার ইসরায়েলিদের হামলা থেকে বাঁচতেও অনেক মানুষ ‘নিরাপদ আশ্রয়’ ভেবে হাসপাতালটিতে অবস্থান নিয়েছিলেন।
গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত সরকার হাসপাতালের উপর এ হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
এক বিবৃতিতে গাজার সরকার বলেছে, ‘হাসপাতালটিতে কয়েকশ আহত ও অসুস্থ মানুষ ছিলেন। এছাড়া জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষও এখানে ছিলেন।’
আরও পড়ুন:- ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞ অব্যাহত থাকলে মুসলমানদের কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না: খামেনি
গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর নির্বিচার বিমান হামলায় গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছিল হামাস। এরমধ্যেই হাসপাতালে চালানো হলো ভয়াবহ হামলা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ওই হাসপাতালটির একটি হলরুমে কয়েকশ বাস্তুচ্যুত মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। মূলত বিমান হামলা থেকেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন তারা। তবে সেখানেও চালানো হয়েছে নৃশংসতা।
ভয়াবহ এই হামলার দায় এখনো স্বীকার করেনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। তারা বলেছে, হামলার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, হামলার পর সেখানে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আল জাজিরার টিভি চ্যানেলে প্রকাশিত ফুটেছে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রায় সব জায়গায় মানুষের রক্ত পড়ে আছে। যেগুলো তখনো শুকায়নি।