ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করায় হার্ভার্ড ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকরি দিলো না ল ফার্ম
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০২:৪২ PM , আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:২১ PM

হামাসের হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য দুই বিদ্যাপীঠ হার্ভার্ড ও কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির আইনের ৩ শিক্ষার্থীকে চাকরি দেয়নি অভিজাত এক ল ফার্ম বা আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েল নামে ওই ল ফার্ম বলছে, ‘ফার্মের মূল্যবোধের’ বিরুদ্ধে ওই শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেওয়া তাদের তাঁদের চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কাউকেই ফার্মে চাকরি দেওয়া হবে না।
চাকরির প্রস্তাব হারানো তিন শিক্ষার্থীর নাম প্রকাশ করা হয়নি। তারা হার্ভার্ড ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীল বারের পাঠানো ইমেইল যাচাই করে বিবিসি জানিয়েছে, শিক্ষার্থীরা অবস্থান পরিবর্তন করলে প্রতিষ্ঠানটির দরজা তাঁদের জন্য আবার খুলেও যেতে পারে।
আরও পড়ুন:- ‘আমি হামাস ও পুতিনকে জিততে দেব না’
গত মঙ্গলবার চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানায় ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েল। এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার অ্যাটর্নি নিয়োগ দেওয়া এই প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক আয় প্রায় ১৭০ কোটি ডলার। মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত সম্পর্কে যখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতামত চাওয়া হচ্ছে, তখন আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির এই সিদ্ধান্তে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১৪০০ ইসরায়েলি নিহত হওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৫৯। এ প্রেক্ষিতে হার্ভার্ড আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্যালেস্টাইন সলিডারিটি কমিটি এবং আরও ৩০টিরও বেশি ছাত্র সংগঠন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা, বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা সকল ছাত্র সংগঠন সহিংসতার জন্য সম্পূর্ণরূপে ইসরায়েলি সরকারকে দায়ী করি।’
এ ঘটনার পর কয়েকটি দাতা সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থ দেওয়া বন্ধেরও হুমকি দেয়। হার্ভার্ড জিউয়িশ সেন্টার বিবৃতিটিকে ‘ইহুদিবিরোধী’ বলে অভিহিত করে। তাই ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েলের এ রকম প্রতিক্রিয়া একদমই অপ্রত্যাশিত নয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কয়েকটি ছাত্র সংগঠন এবং নেতারা পরবর্তীতে নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের কথা জানান। তারা দাবি করেন, সম্পূর্ণ বিবৃতিটি প্রকাশের আগে তারা পড়ে দেখেননি। এর সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু সম্পর্কেও তারা অবগত ছিলেন না।
আরও পড়ুন:- লেবানন থেকে ইসরায়েলে বৃষ্টির মতো রকেট ছুড়েছে হিজবুল্লাহ
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা শিক্ষার্থীদের ছবি বোস্টনের বিলবোর্ডে ঝুলিয়েছে রক্ষণশীল গণমাধ্যম সংস্থা অ্যাক্যুরেসি ইন মিডিয়া (এআইএম)। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম গিলেট বিবিসিকে বলেন, শিক্ষার্থীরা যে বার্তাগুলো প্রকাশ করেছে আমরা স্রেফ সেগুলোই প্রকাশ করেছি। তারা যদি তাদের কাজের জন্য অনুতপ্ত হয় ও ক্ষমা চায় তবে আমরা তাদের ছবি তুলে নেব।
কলাম্বিয়ার ২০টিরও বেশি ছাত্র সংগঠন অনেকটি একইরকম বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। সেখানে বলা হয়, যুদ্ধ এবং হতাহতের দায় নিঃসন্দেহে ইসরায়েলি চরমপন্থী সরকার এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকারগুলোর ওপর বর্তায়।
তবে চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যাপারে ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ডওয়েলই প্রথম নয়। এর আগে উইনস্টন অ্যান্ড স্ট্রন নামের আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি রায়না ওয়ার্কম্যানকে দেওয়া চাকরির প্রস্তাব ফিরিয়ে নিয়েছিল। রায়না ওয়ার্কম্যান শিক্ষার্থীদের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছিলেন, হামাসের হামলার সম্পূর্ণ দায় ইসরায়েলের। ওয়ার্কম্যান এক বিবৃতিতে বলেছেন, ছাত্র সংগঠনের সভাপতি হিসেবে অপসারণের পাশাপাশি প্রাণনাশের হুমকিও তিনি পেয়েছেন।
আরও পড়ুন:- ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রির খবরে লন্ডনের ‘স্কুল অব ইকনোমিকস’ ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ
মানবাধিকার সংগঠন দ্য ফাউন্ডেশন ফর ইনডিভিজুয়্যাল রাইটস অ্যান্ড এক্সপ্রেশন (ফায়ার) বলেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতে শিক্ষার্থীদের বাক্স্বাধীনতা এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। ফায়ারের ক্যাম্পাস রাইট অ্যাডভোকেসি ডিরেক্টর অ্যালেক্স মোরে বলেন, ‘আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে করপোরেশনগুলোর চাকরির প্রস্তাব প্রত্যাহার করার অধিকার রয়েছে। তারা চাইলে হার্ভার্ড থেকে কাউকে নিয়োগ নাও দিতে পারে। কিন্তু আমরা কি এমন একটি সমাজে বাস করতে চাই যেখানে চাকরি পাওয়ার জন্য প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি একই হতে হবে?’
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের ‘স্কুল অব ইকনোমিকস’ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি করছে, এমন খবরে এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ‘স্টপ আর্মিং ইসরায়েল’ লেখা ব্যানার হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।
এছাড়া গাজায় ইসরায়েলের অমানবিক ও বর্বর হামলার প্রতিবাদে ও ফিলিস্তিনিদের পক্ষে ভারতের আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘটনায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে। এছাড়া ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী এক এমপি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানায়।