গাজায় প্রতি ১৫ মিনিটে ১ জন শিশু নিহত হচ্ছে
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫১ PM , আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:৫১ PM

গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় প্রতি ১৫ মিনিটে একজন শিশু নিহত হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়েছে একটি ফিলিস্তিনি এনজিও।
হামাসের হামলার পাল্টা জবাবে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল বোমা হামলা চালাচ্ছে। চলমান এ হামলায় প্রতিদিন একশোরও বেশি শিশু নিহত হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রোববার (২২ অক্টোবর) জানিয়েছেন, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৫,০৮৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে; এরমধ্যে রয়েছে ২,০৫৫ শিশু।
দ্য ডিফেন্স ফর চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল-প্যালেস্টাইন (ডিসিআইপি)-র একজন মুখপাত্র বলেছেন, "আমরা বাস্তবে একটি গণহত্যা প্রত্যক্ষ করছি।"
আরও পড়ুন:- যে দুই শর্তে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করা হবে, জানালো ইসরায়েল
এমনকি ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় নিহত ১৪০০ ইসরায়েলির মধ্যে কমপক্ষে ১৪ শিশু রয়েছে বলে জানা গেছে। হামাসের হাতে বন্দী প্রায় ২০০ জনের মধ্যেও শিশু রয়েছে। তবে, ইসরায়েল হামাসের হামলায় নিহত সবার তথ্য প্রকাশ করেনি।
শিশুরা কি যুদ্ধে আইনতভাবে সুরক্ষিত নয়?
হ্যাঁ। আইনতভাবেই শিশুরা যুদ্ধে সুরক্ষিত। ১৯৪৯ সালে জেনেভা কনভেনশনের অধীনে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সশস্ত্র সংঘাতের বিধি পাস করা হয়। এতে বলা আছে, যুদ্ধের সময় শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং তাদের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে।
হলোকাস্টের সময় ইউরোপে দেড় মিলিয়ন ইহুদি শিশু নিহত হওয়ার মাত্র দুই বছর পর ইসরায়েল ১৯৫১ সালে কনভেনশনের বিধিগুলোর স্বীকৃতি দেয়। কিন্তু ইসরায়েল ৪র্থ জেনেভা কনভেনশনকে স্বীকৃতি দেয়নি। ৪র্থ কনভেনশনে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াইরত বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার কথা বলা আছে। ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে দখলকৃত ভূমি বলে মনে করে না।
গাজায় সামরিক শক্তির অসম ব্যবহারকে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার একটি বৈধ উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে। আর তাই হামলায় শিশুসহ বেসামরিক মানুষের মৃত্যু যুদ্ধাপরাধ নয় বলে দাবি ইসরায়েলের।
যুদ্ধ শিশুদের উপর কী প্রভাব ফেলছে?
৩০ বছর বয়সী একজন মা আল জাজিরাকে বলেছিলেন, তার ৮ বছর বয়সী ও ২ বছর বয়সী দুই বাচ্চাই বিমান হামলার পর থেকে থেকে বমি করছে। যা অতি মাত্রায় ভয়ের একটি প্রতিক্রিয়া।
এই দুই শিশুর মতোই অবস্থা গাজার ৯৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি শিশুর, যারা যুদ্ধের মানসিক প্রভাব নিয়ে বেঁচে থাকছে প্রতিদিন।
আরও পড়ুন:- তারা আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করেছিল: হামাসের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত ইসরায়েলি নারী
ফিলিস্তিনি মনোবিজ্ঞানী ড. ইমান ফারাজাল্লাহর লেখা একটি গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া শিশুদেরকে মানসিক, আবেগজনিত ও আচরণগতভাবে উচ্চ মূল্য দিতে হয়।
বড় ছেলে কুসায়কে (১৩) নিয়ে উদ্বিগ্ন চার সন্তানের মা, গাজা শহরের বাসিন্দা সামাহ জাবর (৩৫)। তিনি আল জাজিরাকে বলেন: "সে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে এবং আজকাল অন্যদেরকে প্রচুর মারধর করে। যেকোন শব্দেই সে লাফিয়ে ওঠে। কেউ জোরে কথা বললে সে সহ্য করতে পারেনা। এমনকি কেউ মজার ছলে বললেও সে তা সহ্য করতে পারেনা। আমি ওকে সবসময়ই বলি, এই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে।"
অনেক শিশু, এমনকি কিশোররাও তাদের মা ছাড়া অন্য রুমে যেতে ভয় পাচ্ছে।
ইএএ একটি বিবৃতিতে বলেছে, "সম্মিলিত শাস্তি, প্রতিশোধ, এবং বেসামরিক নাগরিক এবং বেসামরিক অবকাঠামোর উপর হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘন, এবং যদি ইচ্ছাকৃতভাবে করা হয় তাহলে তা যুদ্ধাপরাধ।"
গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য মেডিকেল এইডের সাথে কাজ করা ব্রিটিশ ফিলিস্তিনি সার্জন গাসান আবু-সিত্তা বলেন, যারা এই যুদ্ধে বেঁচে যাবেন, তাদেরকে তাদের পরিবারের বাকি সদস্যদের ছাড়াই বেঁচে থাকা শিখতে হবে।
তিনি এই যুদ্ধকে 'শিশুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' বলে অভিহিত করেছেন।
ডিসিআইপির গবেষক ড. মোহাম্মদ আবু রুকবেহ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, "এই যুদ্ধে শুধু নিহতদেরকেই আমরা হারাবো না। বরং বেসামরিক নাগরিক ও শিশুদের উপর যে বিপর্যয়কর মানসিক প্রভাব পড়বে, সেটিও বহন করতে হবে আমাদেরকে।"
আরও পড়ুন:- মৃত শিশুদের শনাক্তে শরীরে নাম লিখে রাখছেন ফিলিস্তিনি মা-বাবারা!
ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলার মধ্যে সীমান্ত বন্ধ থাকায় সেভ দ্য চিলড্রেন সহ আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
ইউনিসেফের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "গাজায় শিশু এবং বেসামরিকদেরকে জরুরি সাহায্যের অনুমতি দেওয়ার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং মানবিক প্রবেশাধিকার এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।"
"একটি শিশু কেবলই একটি শিশু। শিশুদের সর্বদা সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কখনই আক্রমণের শিকার হতে দেওয়া যাবে না।"
এদিকে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এমন অভিনয় করছে যে ফিলিস্তিনের শিশুরা মূল্যহীন, তাদের কোনো মুখায়ব নেই, নেই কোনো নামও।
তিনি গাজায় চালানো ইসরায়েলি হামলার বিষয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন। বলেছেন, এই হামলা পুরোপুরি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি।