জাতিসংঘ মহাসচিবের মন্তব্যের জের

প্রতিশোধ নিতে জাতিসংঘ প্রতিনিধিদের ভিসা দেবে না ইসরায়েল

ইসরায়েল
জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান।  © টাইমস অব ইসরাইল (ফাইল ছবি)

ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলা 'শূন্য থেকে হয়নি'—জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের এমন মন্তব্যের পর সংস্থাটির সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্কের বৈরিতা বেড়েছে। এর জেরে ইসরায়েল জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের ভিসা দেবে না বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত। 

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরাইলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমে এই মন্তব্য করেছেন।

এর আগে গতকাল জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস সরাসরি নাম না নিয়ে ইসরায়েলের সমালোচনা করে বলেছিলেন, গাজায় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের যে সুস্পষ্ট লঙ্ঘন দেখতে পাচ্ছেন, তা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, একটি সংঘাতে কোনো পক্ষই আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

আরও পড়ুন:- যুদ্ধ নিয়ে মন্তব্যের জের, জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি ইসরায়েলের

গুতেরেস আরও বলেন, ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলা 'শূন্য থেকে হয়নি'। 

তিনি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণ ৫৬ বছর ধরে শ্বাসরুদ্ধকর দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে। তারা তাদের ভূখণ্ড বসতিতে পরিণত হতে এবং সহিংসতায় জর্জরিত হতে দেখেছে। তাদের অর্থনীতি থমকে গেছে। এই মানুষগুলো বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের দুর্দশার রাজনৈতিক সমাধানের আশাও ধুলোয় মিশে গেছে।

অনেক দেশই গুতেরেসের 'অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ' পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বলে জানিয়েছেন আল জাজিরার প্রতিবেদক গ্যাব্রিয়েল এলিজোনদো। কিন্তু এ মন্তব্যে ইসরায়েল অত্যন্ত 'ক্ষিপ্ত' হয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে পদত্যাগ করতে আহ্বান জানিয়েছে।

এ মন্তব্যে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোহেন এতই 'বিচলিত' হন যে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত একটি বৈঠকও তিনি বাতিল করে দেন। 

আরও পড়ুন:- হামাসকে ‘নির্দয়ভাবে’ দমনে আন্তর্জাতিক সামরিক জোট ব্যবহারের প্রস্তাব ম্যাক্রোঁর

এদিকে গুতেরেসের মন্তব্যের জেরে গিলাদ এরদান আর্মি রেডিওকে বলেন, 'তার (গুতেরেসের) এই মন্তব্যের জন্য আমরা জাতিসংঘের কোনো প্রতিনিধিকে ভিসা দেব না। আমরা ইতিমধ্যে হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ারস-এর আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন গ্রিফিথের ভিসা প্রত্যাখ্যান করেছি। তাদেরকে একটা শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে।' 

এরদান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (টুইটার) এক পোস্টে লিখেছেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই বক্তব্য 'সন্ত্রাসবাদ এবং হত্যার পক্ষে একটি সমঝোতা প্রকাশ করে'। 

পরে গুতেরেস এক্সে নিজের বক্তব্যের একটি অংশ পোস্ট করেন, যাতে দেখা যায় যে গাজা সংকটের জন্য তিনি হামাস ও ইসরায়েল দুপক্ষেরই সমালোচনা করেছেন।

গুতেরেস লেখেন, 'ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার কারণে হামাসের ভয়ংকর হামলা ন্যায্যতা পেতে পারে না। আর ওই ভয়ংকর হামলার কারণে ফিলিস্তিনি মানুষদের সম্মিলিতভাবে যে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে, তা-ও ন্যায্যতা পেতে পারে না।'

আরও পড়ুন:- হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন নয়, তারা মুক্তিকামী যোদ্ধা: এরদোগান

এদিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের পদত্যাগ দাবি করায় ইসরায়েলের সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।  

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আকস্মিক আক্রমণ করে হামাস। এতে ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। 

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় গাজার ৬ হাজার ৫৪৬ জন ফিলিস্তিনি শহীদ হয়েছেন। নিহত ফিলিস্তিনিদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। এদের মধ্যে আবার শিশুরাই নিহত হয়েছে বেশি। এখন পর্যন্ত ২১০০ এর উপরে ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে।