ইইউতে কাজ করছে নেতানিয়াহুর লবি
গাজার ২৩ লাখ মানুষকে মিশরের সিনাইয়ে পাঠাতে চায় ইসরায়েল
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৪২ PM , আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:৪২ PM

অবরুদ্ধ গাজার অধিবাসীদের মিসরের সিনাই মরুভূমিতে ঠেলে দিতে চায় ইসরায়েল। এ বিষয়ে মিসরকে চাপ দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) কাজ করছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর লবি।
গতকাল সোমবার (৩০ অক্টোবর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন থেকে নেতানিয়াহুর এই পরিকল্পনার বিষয়টি জানা গেছে।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে জানিয়েছে, এই বিষয়টি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গত সপ্তাহেই আলাপ হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, অস্ট্রিয়া ও চেক রিপাবলিকের নেতার বিষয়টির প্রতি সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। আগামী বৃহস্পতিবার বা শুক্রবার বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের আলোচনার টেবিলে উপস্থাপন করা হবে।
আরও পড়ুন:- গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে চাকরিচ্যুত হলেন ব্রিটিশ এমপি
তবে ইউরোপের শক্তিশালী দেশ জার্মানি ও ফ্রান্স এরই মধ্যে এমন প্রস্তাব অবাস্তব বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারা জানিয়েছেন, মিসরের কর্মকর্তারা এর আগেও এমন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন, এবারও তাই করবেন। এমনকি অস্থায়ী ভিত্তিতেও মিসর গাজাবাসীকে শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করবে না।
মিসর বারবার জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা যে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে তা অর্জন করতে হলে গাজাবাসীকে নিজের ভূমি ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়া উচিত হবে না। এর আগে, গত রোববার হোয়াইট হাউস জানিয়েছে—গাজাবাসীকে যাতে নিজের ভূমি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে না হয় তা নিশ্চিত করার বিষয়টি অন্যতম এজেন্ডা ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসির মধ্যকার ফোনালাপে।
এদিকে, গাজা উপত্যকায় হামাসের পতনের পর বাসিন্দাদের মিসরের সিনাইয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল। গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থার এক নথি থেকে এ তথ্য ফাঁস হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকাশিত নথি অনুসারে, ইসরায়েল গাজার বেসামরিক নাগরিকদের প্রথমে উত্তর সিনাইয়ের অস্থায়ী আশ্রয়ে সরিয়ে নেবে। পরে স্থায়ী শহরে পাঠিয়ে দেবে।
আরও পড়ুন:- গাজায় ২৩ দিনে ৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত
নথিতে উল্লেখ করা প্রস্তাব অনুসারে, মিসরের ভেতরে কয়েক কিলোমিটারজুড়ে বাফার জোন স্থাপন করা হবে, যেন বাসিন্দারা ইসরায়েলি সীমান্তের কাছে ঘেঁষতে না পারে। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা নথিগুলো সঠিক বলে কথা স্বীকার করেছেন। তবে, এ নথি তৈরির সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ প্রস্তাব গ্রহণ নিয়ে সরকার কোনো আলোচনা করবে না।’
নথিতে এ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আন্তর্জাতিক মহল থেকে চাপ আসার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, শরণার্থীদের যুদ্ধ থেকে পালাতে সাহায্য করার উপায় হিসেবে এ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে টাইমস অব ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল সোমবার স্বীকার করেছে যে, ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে নিন্দা ও মিশরের সঙ্গে উত্তেজনা বৃদ্ধি সত্ত্বেও নেতানিয়াহুর একটি মন্ত্রণালয় গাজা স্ট্রিপের ২.৩ মিলিয়ন মানুষকে মিশরের সিনাই উপদ্বীপে স্থানান্তর করার জন্য একটি যুদ্ধকালীন প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করেছে।
আরও পড়ুন:- ইসরায়েলকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিয়ে দেব: এরদোগান
প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় গোয়েন্দা মন্ত্রকের দ্বারা সংকলিত প্রতিবেদনটিকে একটি অনুমানমূলক এবং "খসড়া কাগজ" হিসাবে উপস্থাপন করেছে। কিন্তু এর উপসংহারগুলি দীর্ঘস্থায়ী মিশরীয় ভয়কে আরও গভীর করে যে ইসরায়েল গাজাকে মিশরের সমস্যায় পরিণত করতে চায় এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য তাদের সবচেয়ে বড় আঘাতের স্মৃতি পুনরুজ্জীবিত করছে। ১৯৪৮ ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড থেকে লাখ লাখ বাসিন্দাকে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের মুখপাত্র নাবিল আবু রুদেইনেহ রিপোর্টটি সম্পর্কে বলেছেন, “আমরা যে কোনো জায়গায়, যে কোনো রূপে স্থানান্তরের বিরুদ্ধে, এবং আমরা এটিকে একটি লাল রেখা বলে মনে করি যা আমরা অতিক্রম করতে দেব না। "১৯৪৮ সালে যা ঘটেছে তা আর ঘটতে দেওয়া হবে না।"