গাজায় যুদ্ধবিরতি না হলে বাইডেনকে ভোট না দেওয়ার হুমকি মুসলিম আমেরিকানদের

গাজা
ইসরায়েলি বর্বর হামলায় ধ্বংসের নগরী গাজা। (ইনসেটে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন)  © সংগৃৃহীত

ডেমোক্রেটিক পার্টির কিছু কর্মী ও মুসলিম আমেরিকানরা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকরে পদক্ষেপ না নিলে ২০২৪ সালে জো বাইডেন যেন ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে না পারেন, সেজন্য মুসলিম ভোটারদের মধ্যে প্রচারণা চালাবেন তারা। পাশাপাশি অনুদানও বন্ধ করে দেবেন।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) মিশিগান, ওহাইয়ো ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর ডেমক্রেটিক নেতাদের নিয়ে গঠিত ন্যাশনাল মুসলিম ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল বাইডেনের প্রতি যুদ্ধবিরতি কার্যকরে নিজের প্রভাব কাজে লাগাতে আহ্বান জানান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, '২০২৩ সিজফায়ার আলটিমেটাম' শিরোনামের এক খোলা চিঠিতে মুসলিম নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যেসব প্রার্থী ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি আক্রমণে সমর্থন দেবেন, তাদের পক্ষে ভোট, সমর্থন, সহায়তা সব বন্ধ করে দিতে মুসলিম ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করবেন তারা।

আরও পড়ুন:- গাজায় ইসরায়েলি হামলায় বাবা ও দুই বোনসহ ১৯ স্বজনকে হারালেন আল জাজিরার কর্মী

খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বাইডেন প্রশাসনের নিঃশর্ত সমর্থন, বিপুল অনুদান ও অস্ত্রশস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং ভোটারদের বিশ্বাসভঙ্গ করেছে। 

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের আক্রমণের বিরুদ্ধে আরব ও মুসলিম আমেরিকানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হতাশা ও ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ এই খোলা চিঠি। 

মিনেসোটার ফিলিস্তিনি আমেরিকান আইনপ্রণেতা রাশিদা লাইব সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ ৯০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পোস্ট করে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন দিতে বাইডেনকে আহ্বান জানিয়েছেন। ওই ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ না করলে '২০২৪ সালে আমাদের ভোট পাওয়ার আশা রাখবেন না'।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে বাইডেনের জন্য মুসলিম ভোট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। ২০২০ সালে মিশিগানের ১৬টি ইলেকটোরাল ভোট মাত্র ২.৬ শতাংশ ব্যবধানে জিতেছিলেন বাইডেন।

আরও পড়ুন:- ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে ইডেনের গ্যালারিতে আটক ৪ যুবক

বুধবার মিনেসোটা সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে বাইডেনের। ওই রাজ্যের মুসলিম আমেরিকানরাও যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে একই আলটিমেটাম দিয়েছেন।

গত বৃহস্পতিবার বাইডেন কয়েকজন মুসলিম নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা। 

নিজেকে জায়নবাদী দাবি করলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার প্রশাসনে আরব আমেরিকান ও মুসলিমদের নিয়োগ বাড়িয়েছেন। তার শাসনামলেই প্রথম মুসলিম ফেডারেল বিচারক পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

স্যাক্রামেন্টো ভ্যালি কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস-এর (সিএআইআর) মিনেসোটার নির্বাহী পরিচালক জায়লানি হুসেইন বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে অন্যান্য রাজ্যের মুসলিম ভোটাররাও একই দাবি জানাবেন। 

হুসেইন বলেন, 'আমরা আশা করছি, উইসকিনসিন, ওহাইয়োসহ অন্যান্য রাজ্যও এ সপ্তাহে একই দাবি জানাবে।' তিনি বলেন, যুদ্ধ থামাতে না বললে ২০২৪ সালে বাইডেনের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না তার। 

হুসেইন জানান, ২০২০ সালের নির্বাচনে ৭০ শতাংশ মুসলিম আমেরিকান বাইডেনকে ভোট দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন:- স্থল অভিযানে হামাসের হামলায় ৯ ইসরাইলি সেনা নিহত

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা করে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে হামাসের বিরুদ্ধে যু্দ্ধ ঘোষণা করে ইসরায়েল। এর পর থেকে বর্বর হামলা চালাচ্ছে দখলদার দেশটি। এ হামলায় আন্তর্জাতিক কোন আইনেরই তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বেসামরিক মানুষ, হাসপাতাল, স্কুল, গির্জা, মসজিদ, বাড়ি-ঘর কোন কিছুই তাদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, শরণার্থী শিবিরেও হামলা করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করছে ইসরায়েল। আর এ হত্যাকণ্ডে নিঃস্বর্ত সহযোগিতা করে যাচ্ছে আমেরিকা।

ইতোপূর্বে তাদের অস্ত্র ব্যবহার করার জন্য প্রতিটি দেশকে শর্ত দিতো দেশটি, কিন্তু ইসরায়েলে অস্ত্র সাহায্য দিয়ে কোন ধরণের শর্ত আরোপ করেনি বাইডেন প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৫২৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৫৭ জনই শিশু। এর আগে গতকাল গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বর্বর হামলা চালায় দখলদার ইসরায়েল। এই হামলায় ৫০ জনের অধিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও প্রায় সাড়ে ৩০০ বেসামরিক মানুষ।


মন্তব্য