গাজায় গণহত্যা বন্ধে সংস্থার ব্যর্থতায় পদত্যাগ করলেন জাতিসংঘের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২৪ PM , আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২৩, ০৭:২৪ PM

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যা বন্ধে যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে পদত্যাগ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা অফিস অব ইউনাইটেড নেশনস হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটসের (ওসিএইচআর) নিউইয়র্ক কার্যালয়ের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ক্রেইগ মোখিবার। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ( ৩১ অক্টোবর) পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি।
স্থানীয় সময় ২৮ অক্টোবর তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন জেনেভায় অবস্থিত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান ভলকার তুরক বরাবর। এতে তিনি বলেন, আমি এমন সময় আপনার উদ্দেশ্যে এই পদত্যাগপত্রটি দিচ্ছি যখন গাজায় চলা গণহত্যা ইস্যুতে সারাবিশ্বে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সবকিছু চোখের সামনে ঘটা সত্ত্বেও আমাদের প্রতিষ্ঠান এই নিপীড়ন, গণহত্যা থামাতে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। আমি এই গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মোখিবার আরও উল্লেখ করেন, ‘ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় এখন যা চলছে তা স্পষ্টতই গণহত্যা, যাকে আমরা বলতে পারি টেক্সবুক কেস অব জেনোসাইড। এ ব্যাপরে সংশয়ে ভোগার কোনো কারণ বা সুযোগ আর কারোর নেই। আমাদের চোখের সামনে প্রতিদিন শত শত ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন:- গাজায় যুদ্ধবিরতি না হলে বাইডেনকে ভোট না দেওয়ার হুমকি মুসলিম আমেরিকানদের
তিনি বলেন, ‘এই গণহত্যার পর কী হবে তাও আমরা অনুমান করতে পারি। গাজার মাটি থেকে জাতিগত ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে উগ্র জাতীয়তাবাদী বসতি স্থাপনকারীদের পুনর্বাসন করার যে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইসরায়েল, তা বাস্তবায়িত করা হবে।’
এদিকে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তেল আবিবের ঘনিষ্ট মিত্র যুক্তরাষ্ট্র তার অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়ে জাতিসংঘকে ঘিরে ধরেছে এবং এর ফলে ইসরায়েলি লবি ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এই ভয়ঙ্কর গণহত্যাকে অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করছে। তারা ইসরায়েলকে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, কূটনৈতিক, গোয়েন্দা তথ্য এক কথায় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে। পশ্চিমা কর্পোরেট সংবাদমাধ্যমগুলোও এমনভাবে সংবাদ প্রকাশ করছে, যাতে এ পুরো প্রক্রিয়া কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত না হয়।’
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের ইরেজ এলাকায় অতর্কিত হামলা চালায় গাজার নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস। সীমান্ত বেষ্টনী বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েন কয়েক শত প্রশিক্ষিত হামাস যোদ্ধা। সেখানে প্রথমেই কয়েক শ বেসামরিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেন তারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২১২ জন ইসরায়েলিসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিককে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করেন হামাস যোদ্ধারা।
আরও পড়ুন:- আমাদের সেনারা ভয়াবহ রকমের মানসিক অবসাদগ্রস্ত: ইসরাইলি স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে সেদিনই গাজা উপত্যকায় বিমান অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। সেই সঙ্গে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় গাজার বিদ্যুৎ, পানি, খাবার সরবরাহ ও চিকিৎসাব্যবস্থা। সেখানে নির্বিচারে যুদ্ধাপরাধ করে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের বর্বর হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, গির্জা, শরণার্থী শিবির কোন কিছুই।
অবরুদ্ধ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযানে গত তিন সপ্তাহে এই উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৮ হাজার ৫২৫ জন। নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী-শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে,ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৫৭ জন শিশু নিহত হয়েছে।
অন্যদিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪০০ জনের কিছু বেশি ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক।