হিজবুল্লাহ ভয় পায় না: মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন সম্পর্কে হাসান নাসরুল্লাহ

হিজবুল্লাহ
হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরুল্লাহর বক্তব্য শুনতে বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে  © দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

অক্টোবরের ৭ তারিখ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর প্রথমবারের মতো মুখ খুলেছেন লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘হিজবুল্লাহ হামলার আগে এ সম্পর্কে কিছুই জানত না।’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ ক্রমেই ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটি আর একটি ফ্রন্টে সীমাবদ্ধ নেই।’ খবর ডেইলি মেইলের।

হাসান নাসরুল্লাহ আল আকসা ফ্লাডের প্রশংসা করে বলেন- ‘এটি গৌরবময় এক জিহাদি অপারেশন যেটা ইহুদি রাষ্ট্রে ‘ভূমিকম্প’ ঘটিয়েছে। এতে ইসরাইলের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।’

৬৩ বছর বয়সী এ নেতা একটি অজানা স্থান থেকে বৈরুতের হাজার হাজার দর্শকের উদ্দেশ্যে এ বার্তা দেন। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত বক্তৃতা দেখার জন্য ছোট শহরগুলোতে বিভিন্ন স্কোয়ারে মানুষ জড়ো হয়। এসময় হিজবুল্লাহর হলুদ পতাকা নেড়ে তারা যাওয়ার সময় উদযাপন করে এবং ফাঁকা গুলি চালায়।

তিনি আরও বলেন, ‘৭ অক্টোবরের অপারেশনটি সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সাথে পরিকল্পনা করা হয়েছিল। বিদেশে প্রতিরোধ আন্দোলনের কথা বাদ। অন্যান্য ফিলিস্তিনি দলগুলোও এটির সম্পর্কে কিছুই জানত না।’

তার বিস্তৃত ভাষণে তিনি বলেন, এ হামলার দুটি লক্ষ্য ছিল : গাজার বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করা এবং হামাসের বিজয় নিশ্চিত করা।

তিনি ‘ইরাকি, ইয়েমেনি হাত- যারা এ যুদ্ধে যোগ দিয়েছেন’ তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি সারা বিশ্বে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের পক্ষে অবস্থান জানান।

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইরানকে দায়ী করলেও ৭ অক্টোবরের হামলাটি ছিল শতভাগ ফিলিস্তিনি অপারেশন। এটি ফিলিস্তিনিদের দ্বারা পরিকল্পিত এবং ফিলিস্তিনিদের দ্বারাই কার্যকর করা হয়। কোনো আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সমস্যার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই।’

এদিকে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে ‘সমঝোতা চুক্তি’র জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছে হামাস। সংগঠনটির রাজনৈতিক ব্যুরোর সিনিয়র সদস্য গাজি হামাদ এনবিসি নিউজকে এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।

হামাদ বলেন, ‘আমরা চাই এই মানুষগুলো বাড়ি ফিরে যাক।’ তিনি আরও বলেন, এ ছাড়াও, আমরা চাই- আমাদের বন্দিরাও এখন বাড়ি ফিরুক। আমি মনে করি আমরা এখন সম্পূর্ণ সমঝোতা করতে, একটি চুক্তি সম্পন্ন করতে প্রস্তুত। তিনি শর্ত আরোপ করে বলেন, ‘ইসরায়েলি ডিটেনশন সেন্টার থেকে সব বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে।’

হামাদ বলেন, হামাস যোদ্ধারা কখনোই বেসামরিক মানুষকে হত্যা করতে চায়নি। আমাদের ইসলামের ধর্মে কোনো বেসামরিক নাগরিকের ক্ষতি করা বা হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

হাসান নসরুল্লাহ বলেছেন, হিজবুল্লাহ হামাসের সারপ্রাইজ আক্রমনের পরদিন যুদ্ধে প্রবেশ করেছে। তিনি বলেন, লেবানন-ইসরায়েলি সীমান্তে আমাদের যুদ্ধ এখন অনেক ছোট আকারের মনে হলেও এর প্রভাব অনেক বড়। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে হিজবুল্লাহর ৫৭ জন যোদ্ধা শহীদ হয়েছেন।

নাসরাল্লাহ বলেছেন, হিজবুল্লাহ দিন দিন তাদের কার্যক্রম বাড়িয়েছে এবং ইসরায়েলকে গাজা বা অধিকৃত পশ্চিম তীরের পরিবর্তে লেবানন সীমান্তের কাছে তার বাহিনী রাখতে বাধ্য করছে।

নাসরাল্লাহ পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, লেবাননের ফ্রন্টে সব বিকল্প খোলা আছে। তিনি বলেছেন, হিজবুল্লাহ সব সম্ভাবনার জন্য প্রস্তুত।

এই অঞ্চলে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের বিষয়ে নাসরাল্লাহ বলেছেন, হিজবুল্লাহ ভয় পায় না।

হিজবুল্লাহ প্রধান বলেছেন, কেউ যদি আঞ্চলিক যুদ্ধ ঠেকাতে চায়, তাকে দ্রুত গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে।

তিনি গাজা যুদ্ধের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী করেছেন এবং ইসরাইলকে নিছক একটি নির্বাহী হাতিয়ার বলে অভিহিত করেন।


মন্তব্য