গাজায় শিশু-নারী হতাহত দেখে যাদের প্রাণ না কাঁদে, তারা পাথরের তৈরি: পুতিন

গাজা
গাজায় ইসরায়েলি হিংস্রতার বলি এক শিশু  © সংগৃৃহীত

গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে আবারও প্রতিবাদ জানালেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, গাজায় সহিংসতায় হতাহত শিশু-নারী ও বেসামরিক লোকজনকে দেখেও যাদের প্রাণ কেঁদে না ওঠে, তাদের হৃদয় পাথরের তৈরি।

গতকাল শুক্রবার (৩ নভেম্বর) মস্কোতে এক উচ্চ পর্যায়ের সরকারি বৈঠকে তিনি একথা বলেন।

পুতিন আরও বলেন, একটি স্ফুলিঙ্গ কিংবা গোলা নিক্ষেপ করা সহজ, খুবই সহজ; কিন্তু তারপর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আপনি যদি স্বাভাবিক মানুষ হন, তাহলে যখন হামলায় রক্তাক্ত শিশুদের যন্ত্রণা আপনি নিজের চোখে দেখবেন, সেসময় আপনার হাতের মুঠো দৃঢ় হবে এবং চোখ অশ্রুতে ভরে উঠবে। সাধারণ লোকজনের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘঢ়টে থাকে।

আরও পড়ুন:- ফিলিস্তিনে দুই বিমানে ২৮ টন মানবিক সহায়তা পাঠালো রাশিয়া

রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘গাজায় এসব ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পরও যারা স্বাভাবিক রয়েছে, কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না- তারা দেখতে মানুষের মতো হলেও আসলে তাদের হৃদয় নেই; কিংবা যদি থেকেও থাকে- তাহলেও সেই হৃদয় রক্ত-মাংস দিয়ে নয়, পাথরে তৈরি।’

গত ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহত ইসরায়িলে হামলায় শতাব্দির সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক সংকটে পড়েছে ফিলিস্তিনের গাজার ২২ লাখ মানুষ। জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থা সেখানে প্রচুর সাহায্য পাঠানোর জন্য বার বার আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ডাকে সাড়া দিয়ে গাজায় সাহায্য পাঠাচ্ছে। যদিও প্রয়োজনের চেয়ে ভয়াবহ রকমের কম সাহায্য গাজায় ঢুকতে পারছে। তবুও বিভিন্ন দেশ তাদের সুবিধামতো মানবিক সহায়তা পাঠাচ্ছে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও বর্তমান রাশিয়া প্রথম থেকেই গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সেখানকার বেসামরিক মানুষদের হত্যার নিন্দা জানিয়েছে। এমনকি জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তাবও উত্থাপন করেছে। শুধু তাই নয়, রুশ মন্ত্রণালয় গাজার বাসিন্দাদের জন্য ২৭ টন খাদ্য সরবরাহ করেছিল। আবারও যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠালো রাশিয়া। 

আরও পড়ুন:- ইসরায়েলি হামলায় এক ফিলিস্তিনি পরিবারের ৪২ জন নিহত

শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাশিয়ার জরুরি অবস্থাবিষয়ক মন্ত্রণালয় গাজা উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদানে দুটি বিমান পাঠিয়েছে বলে মন্ত্রণালয়ের প্রেস সার্ভিস সাংবাদিকদের জানিয়েছে।

এক রুশ মুখপাত্র বলেছেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্টের গাজা উপত্যকার মানুষের কাছে মানবিক পণ্য পরিবহনের জন্য রাশিয়ার জরুরি মন্ত্রণালয়ের দুটি Il-76 বিমান পাঠানো হয়েছে।’ এসব পণ্যের সামগ্রিক ওজন ২৮ টন। সেখানে বিভিন্ন ওষুধ, হেমোস্ট্যাটিক এজেন্ট এবং ব্যান্ডেজিং উপকরণ রয়েছে। কার্গো দুটি মিসরীয় রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। আর তারা এসব পণ্য গাজা উপত্যকায় পৌঁছে দেবে।

এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৪৭টি মসজিদ এবং সাতটি গির্জা ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া গত তিন সপ্তাহে গাজায় ২০৩টি স্কুল ও ৮০টি সরকারি অফিস ধ্বংস হয়েছে। সোমবার (৩০ অক্টোবর) গাজার জনসংযোগ দপ্তরের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

আরও পড়ুন:- সমুদ্র সৈকতে প্রতীকী লাশের সারি রেখে গাজায় শিশু হত্যার অভিনব প্রতিবাদ ব্রাজিলের

হামাস শাসিত গাজার জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক সালামা মারুফ আলজাজিরা আরবি বিভাগকে বলেছেন, ইসরায়েলের ব্যাপক বোমা হামলায় গাজায় দুই লাখ ২০ হাজার আবাসন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৩২ হাজার ভবন সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

এর আগে গাজার জনসংযোগ দপ্তর জানিয়েছিল, একটি অর্থোডক্স সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং একটি স্কুলে বোমা হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। স্কুলটিতে দেড় হাজারের বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তিন সপ্তাহের অব্যাহত বোমা হামলায় গাজায় ৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ এর উপরে শিশু এবং দুই হাজারের বেশি নারী রয়েছে। এ ছাড়া আহত হয়েছে আরও ৩২ হাজারের অধিক মানুষ মানুষ।

সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি, তাস, আল জাজিরা


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ