'গাজা থেকে বিসান বলছি, আমি এখনও বেঁচে আছি'
গাজায় বেঁচে থাকাই যেন এক আশ্চর্য
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০২:৩৬ PM , আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:১৪ PM

২৫ বছর বয়সী গাজার ফিলিস্তিনি বিসান আওদা তার মোবাইল ফোনে স্ট্রিপটিতে ইসরায়েলের নিরলস বোমা হামলা নথিভুক্ত করছেন।
এক মাস আগে যখন সে ফিলিস্তিনি জীবন ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে গল্পকার হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল, এখন তার জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে।
এখন, তিনি প্রতিটি দিনের সংগ্রামের নথিভুক্ত করতে হাসপাতালের ভিতরে এবং গাজার রাস্তায় ভিডিও পোস্ট করছেন।
বিসান এবং তার পরিবার গাজার ১ মিলিয়নেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রয়েছে যারা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ফিলিস্তিনি অঞ্চল গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০ হাজার জনে। আহত হয়েছে আরও অন্তত ২৭ হাজার ২০০ জন। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শিশু ও নারী। গাজা ও ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পৃথক বিবৃতি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন:- অবরুদ্ধ গাজায় বিমান থেকে চিকিৎসা সামগ্রি ফেললো জর্ডান
তুরস্কের সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজারর ৭৭০ জনে। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৭৭০ জনে। নিহতদের মধ্যে ৪ হাজার ৮০০ জনই শিশু ও ২৫৫০ জন নারী।’
বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত) গাজায় ইসরায়েলি হামলা অন্তত ২৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।’
এদিকে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা ওয়াফা নিউজ জানিয়েছে—গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের হাতে অন্তত ১৫৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে আরও অন্তত ২ হাজার ২০০ জন। সব মিলিয়ে গাজা ও পশ্চিম তীরে নিহতের মোট সংখ্যা ৯ হাজার ৯২৩ জন।
এর আগে গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে গাজা প্রশাসনের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান সালামা মারুফ বলেন, ‘ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজায় ৫৫টি মসজিদ, তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি গির্জা ধ্বংস হয়েছে।’
আরও পড়ুন:- ফিলিস্তিনিদের রক্ষা করা তুরস্কের দায়িত্ব: এরদোগান
সালামা মারুফ আরও জানান, গাজা প্রশাসনের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনের পাঁচটি ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ১৬টি হাসপাতাল, ৩২টি প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র এবং ২৭টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস হয়েছে। চিকিৎসা খাতসংক্রান্ত ১০৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গাজার জনসংযোগ বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইসরায়েলি হামলায় ৮ হাজার ৫০০ ঘর, ৪০ হাজার আবাসন ইউনিট পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ২ লাখ ২০ হাজার ইউনিট কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া ৮৮টি সরকারি প্রধান কার্যালয়, ২২০টি স্কুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব স্কুলের মধ্যে ৬০টি মেরামতের অযোগ্য।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কোন কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। সেখানে বেঁচে থাকাই এখন এক আশ্চর্যের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা, আনাদোলু এজেন্সি