খবর প্রকাশে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্ব, নিউইয়র্ক টাইমস কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৩২ PM , আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৩২ PM

যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম সেরা গণমাধ্যম ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে’র কার্যালয়ে গিয়ে অবস্থান নিয়েছিলেন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা। সেখানে গিয়ে গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের খবর প্রচারে ইসরায়েলের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার ম্যানহাটনে সংবাদমাধ্যমটির সদর দপ্তরের সামনে জড়ো হন কয়েক শত বিক্ষোভকারী। তাঁদের মধ্যে অনেকেই নিউ ইয়র্ক টাইমসের কার্যালয়ের ভেতর ঢুকে পড়েন। ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করেন তাঁরা।
বিক্ষোভকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। ‘রাইটার্স ব্লক’ নামের এই গণমাধ্যমকর্মীদের দল সেখানে গাজায় নিহত হাজার হাজার ফিলিস্তিনির নাম পড়ে শোনান। এই নামের তালিকায় ছিলেন অন্তত ৩৬ জন সাংবাদিক, যাঁরা গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:- দৈনিক চার ঘণ্টা ‘যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি ইসরায়েল
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে উপহাস করে বিক্ষোভকারীরা ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা ‘দ্য নিউ ইয়র্ক ওয়ার ক্রাইমস’ বিতরণ করেছে সেখানে। সেই ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকায় নিউ ইয়র্ক টাইমসকে ‘গণহত্যায়’ জড়িত বলে অভিযুক্ত করা হয়। সেই সঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকমণ্ডলীকে প্রকাশ্যে গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সমর্থন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) আন্দোলনকারীদের অবস্থান কর্মসূচিতে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গাজায় ইসরায়েলের নারকীয় হামলায় মৃতের সংখ্যার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি করে আসছেন বিক্ষোভকারীরা। তারই ধারাবাহিকতায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের সামনে অবস্থান নেন তাঁরা।
গত মঙ্গলবার ‘জিউইশ ভয়েস ফর পিস’ নামক গ্রুপের কর্মীরা স্বল্প সময়ের জন্য স্ট্যাচু অব লিবার্টিতে অবস্থান নেন। গত সপ্তাহে শত শত বিক্ষোভকারী ভিড় করেন গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল টার্মিনালে। ‘এখনই যুদ্ধবিরতি’ লেখা ব্যানার টাঙিয়ে ব্যস্ততম সময়ে টার্মিনালটি কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ করে দেন তাঁরা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসের করপোরেট নিরাপত্তাপ্রধান সংবাদমাধ্যমটির কর্মীদের কাছে একটি ইমেইল পাঠান। সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ‘শান্তিপূর্ণ’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, প্রতিবাদের সময় কোনো প্রবেশপথ বন্ধ করা হয়নি।
আরও পড়ুন:- ফেরাউনের পথ অনুসরণ করছে ইসরায়েল: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
গত ৭ অক্টোবর হামাসের আন্তসীমান্ত হামলার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি ইসরায়েলি নিহত হন। এরপর থেকে গাজায় নির্বিচারে হামলা করে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বর্বরতার শিকার হয়ে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১১ হাজার ফিলিস্তিনি। এদের মধ্যে প্রায় ৫ হাজার জনই শিশু। এছাড়া নারী রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। আহত হয়েছে আরও ২৮ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি।
এদিকে গাজার হাসপাতালগুলোতেও হামলা শুরু করেছে দখলদার বাহিনী। গত তিন দিনে গাজার ৮টি হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। এছাড়া শরণার্থী শিবির, অ্যাম্বুলেন্স, মসজিদ, গির্জা, বেসামরিক স্থাপনাসহ গাজার প্রায় অর্ধেক স্থাপনা ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। এর পরেও পশ্চিমা বিশ্ব ও মিডিয়া নির্লজ্জভাবে ইসরায়েলকে সাপোর্ট করে যাচ্ছে।
ইউএনও, হিউম্যান রাইট ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের বড় বড় সংস্থা স্বীকার করেছে গাজায় যুদ্ধাপরাধ হচ্ছে, এমনকি গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল বাহিনী। এর পরেও গণতন্ত্রের বুলি আওড়ানা পশ্চিমা সকল দেশই পক্ষ নিয়েছে দখলদার বাহিনীর।
সূত্র: এপি, আল জাজিরা, নিউ ইয়র্ক টাইমস