গাজার হাসপালে শিশুসহ ১৭৯ জনকে একসঙ্গে গণকবর

গাজা
গাজার আল শিফা হাসপাতালের অবস্থা  © আল জাজিরা

গাজার আল-শিফা হাসপাতালে শিশুসহ ১৭৯ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালটির পরিচালক আমিরাত-ভিত্তিক দ্য ন্যাশনালকে এ খবর জানিয়েছেন। গত শনিবার জ্বালানি সরবরাহ শেষ হয়ে গেলে এই হাসপাতালেই ৩৪ জনের মৃত্যু ঘটেছিল। 

হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ জাকাউত জানিয়েছেন, আশপাশে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান করায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে গণকবরের খনন শুরু হয়। তবে কবরটি খননের জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের কাছে উপযুক্ত কোনো সরঞ্জাম না থাকায় তারা অনেক কসরত করে কবর খনন করছেন। 

দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকায় গাজা থেকে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে মিশরে পা রাখেন আল-শিফা হাসপাতালের ভাসকুলার সার্জন মোহাম্মদ জাকাউত। দ্য ন্যাশনালকে তিনি জানান, মৃতদেহের দুর্গন্ধ এখন পুরো হাসপাতালজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। 

আরও পড়ুন:- ইসরায়েলকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ বলে অভিহিত করলেন এরদোগান

হাসপাতালের পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এই হাসপাতালে রোগীদের কোনো চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে চিকিৎসক হয়েও কাউকে সাহায্য করা যাচ্ছে না। আমরা যা-ই করি না কেন, রোগীরা মারা যাচ্ছে। প্রচুর রক্তের প্রয়োজন হলেও কাউকে রক্ত দেওয়াও যাচ্ছে না। এমনকি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলেও কোনো ব্যবস্থা নেই। আমি বসে বসে আমার রোগীদের মৃত্যু দেখতে পারি না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এখনো যারা বেঁচে আছে—ঈশ্বর তাদের সহায়তা করুন।’ 

চিকিৎসক জানান, আল-শিফা হাসপাতালে ইনকিউবেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যে তিন নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। আরও ৩৬ শিশুকে যেভাবে রাখা হয়েছে তা অস্বাভাবিক। 

গাজার ৩৪টি হাসপাতালের মধ্যে প্রায় ২৫ টিতে এখন আর কোনো পরিষেবা নেই। নেই কোনো অ্যাম্বুলেন্সও। কারণ অ্যাম্বুলেন্সগুলো ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠেছে। ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তাদের ১৮টি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৫ টি। 

আরও পড়ুন:- আল-শিফা হাসপাতালে প্রবেশ করেছে ইসরাইলি বাহিনী, চলছে অভিযান

হাসপাতালটি ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে এখান থেকে পায়ে হেঁটে পালানোর চেষ্টা করেও অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ইসরায়েলি স্নাইপারদের গুলির ভয়ে হাসপাতালে অবস্থান করা মানুষেরা জানালার কাছেও যাচ্ছেন না।

এদিকে আজ হাসপাতালটিতে প্রথমবারের মতো অভিযান চালিয়েছে দখলদার বাহিনী। এর ফলে আতঙ্কিত অবস্থায় আছে হাসপাতালটিতে থাকা হাজার হাজার মানুষ।

অন্যদিকে গাজার আল শিফা হাসপাতালে নিজেদের অবস্থানের কথা অস্বীকার করেছে হামাস। তারা বলছে, আমাদের হাসপাতালে অবস্থানের কথা বলে ইসরায়েল ও আমেরিকা গণহত্যাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছে।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করেছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের বর্বর এই হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও প্রায় ৩৩ হাজার। নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও নারী।

সূত্র: আল জাজিরা


মন্তব্য