গাজার আল শিফা হাসপাতালে দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ইসরায়েলি তাণ্ডব

গাজা
গাজার আল শিফা হাসপাতালে ইসরায়েলি অভিযানের একটি দৃশ্য  © সংগৃৃহীত

গাজার সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল শিফায় দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে ইসরায়েলের আগ্রাসন ও অভিযান। বুধবার (১৫ নভেম্বর) টানা ১৪ ঘণ্টা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগে তাণ্ডব চালায় ইহুদি সেনারা। 

আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) ভোরে আবারও হাসপাতালটিতে প্রবেশ করে দখলদার বাহিনী। অবশ্য হাসপাতালের ভেতরে কী চলছে তা নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না। খবর আল জাজিরার।

আল শিফার নিচে হামাসের সামরিক কমান্ড রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে গত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতাল ঘিরে রেখে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। বুধবার সরাসরি চত্বরে প্রবেশ করে ইহুদি সেনারা। হাসপাতালটির জরুরি বিভাগসহ একাধিক ভবনে ঢুকে পড়ে তারা। এক কক্ষ থেকে আরেক কক্ষে তল্লাশিও চালানো হয়।

এ সময় হাসপাতালটিতে থাকা রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হামাসের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে ইহুদি সেনারা। বুধবার রাতে একটি ভিডিও প্রকাশ করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে হাসপাতালে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখান এক চিকিৎসক। তিনি জানান, প্রয়োজনীয় ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিতে বহু মানুষ। মৃত্যুর সাথে লড়ছেন আইসিইউ’র রোগীরা।

আরও পড়ুন:- আল শিফা হাসপাতালে হামাসের ঘাঁটি বা বন্দী খুঁজে পায়নি ইসরায়েলি বাহিনী

এদিকে হাসপাতালের ভেতরের পরিবেশকে প্রচণ্ড ভয়ংকর বলে অভিহিত করেছেন সেখানকার একজন চিকিৎসক। 

সংবাদ সংস্থা আল জাজিরা জানিয়েছে, প্রায় ৩০ ব্যক্তিকে চোখ বেঁধে হাসপাতালের বাইরে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কিন্তু হামাসের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ এখনো সেখানে পাওয়া যায়নি।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিসে আল জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ জানিয়েছে, আল-শিফা হাসপাতালের ভেতর থেকে প্রায় ৩০ জন ফিলিস্তিনিকে চোখ বেঁধে বিবস্ত্র করে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হাসপাতালের আঙিনায় তিনটি ট্যাংক দিয়ে ঘেরা জায়গায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের নড়াচড়া চোখে পড়লেই তা আমলে নেওয়ার জন্য জরুরি বিভাগের সামনেই রাখা হয়েছে একটি ট্যাংক।

আরও পড়ুন:- গাজার হাসপালে শিশুসহ ১৭৯ জনকে একসঙ্গে গণকবর

সার্জারি ভবনের ভেতরে ইসরায়েলি সেনারা ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। সব পার্টিশন ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, ভেঙে দেওয়া হয়েছে সব দেয়াল। বেসমেন্টে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের। সেখানে একেকজন করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

আল-শিফা হাসপাতালের নিচে অবস্থিত একটি সুড়ঙ্গে হামাস তাদের অভিযানের নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করেছে—এমন দাবি করে সেখানে অভিযান পরিচালনা করার কথা বলেছিল আইডিএফ। তবে ইসরায়েলের একটি রেডিওতে বলা হয়েছে, হাসপাতালটিতে হামাসের উপস্থিতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন:- গাজায় ৭ লাখের বেশি শিশু ঘরছাড়া: ইউনিসেফ

হাসপাতালটির ভেতরে থাকা চিকিৎসক আহমেদ আল মোখাল্লালাতি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর ক্রমাগত গুলিবর্ষণে জানালার কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে বাধ্য হচ্ছে রোগী-চিকিৎসক-আশ্রয়প্রার্থী সবাই। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতর ও আশপাশে গুলি করা হচ্ছে। এটা সত্যিই প্রচণ্ড ভয়ংকর যে এতগুলো নিরীহ মানুষের মাঝে গুলি করা হচ্ছে। হাসপাতালের আশপাশে ঘুরছে ট্যাংক। জরুরি বিভাগের সামনেই একটি ট্যাংক মোতায়েন রাখা আছে। হাসপাতালের চারপাশে সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। সরাসরি হাসপাতালকেই লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে তারা। আমরা জানালা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছি।’

আল-শিফাসহ গাজার হাসপাতালগুলোকে হামাস ব্যবহার করছে—এমন দাবি করার কয়েক ঘণ্টা পরই স্থানীয় সময় আজ বুধবার রাত ১টায় ইসরায়েলি বাহিনী আল-শিফা হাসপাতালে প্রবেশ করেছে। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, চিকিৎসক দল ও আরবি ভাষাভাষীদের অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত তাদের বাহিনী এই অভিযান চালাচ্ছে।

তবে হামাস তার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য হাসপাতাল ব্যবহার করার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। এ বিষয়ে কোনো আন্তর্জাতিক কমিটিকে এসে পরিদর্শনের আহ্বানও জানানো হয়েছে।


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ