৭ অক্টোবর সঙ্গীত উৎসবে হামলার পরিকল্পনা ছিল না হামাসের: ইসরায়েলের প্রতিবেদন

হামাস
  © সংগৃৃহীত

গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে এক সংগীত অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। তবে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সূত্রের বরাত দিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে একটি সঙ্গীত উৎসবে যে আকস্মিক হামলা চালিয়েছিল, সেটি সম্ভবত তাদের পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। তারা ইসরায়েলে প্রবেশের পর উৎসব প্রাঙ্গণে শত শত মানুষের ভিড় লক্ষ্য করার পর তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে হামলার সিদ্ধান্ত নেন।

চলতি সপ্তাহে এ হামলা সংশ্লিষ্ট পুলিশের প্রাথমিক একটি প্রতিবেদন ইসরায়েলের চ্যানেল-১২ এর হাতে আসে। প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা মূলত কাছাকাছি কিবুতজ রে'ইম এবং গাজা সীমান্তের নিকটবর্তী অন্যান্য গ্রামগুলোতে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। তারা ড্রোন এবং প্যারাস্যুটের সাহায্যে ইসরায়েলে প্রবেশের সময় আকাশ থেকে ওই অনুষ্ঠান তাদের নজরে আসে।

অনুষ্ঠানে চার হাজার চারশরও বেশি মানুষ উপস্থিত ছিল। অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সামরিক ঘাঁটি ও দক্ষিণ ইসরায়েলের কিছু গ্রামেও হামলা চালায় হামাস। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের মতে, এ হামলায় এক হাজার দুইশ মানুষ নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

আরও পড়ুন:- 'যারা আমাদের এমন ভোগান্তিতেও চুপ করে আছে তাদের ক্ষমা করবে না'

ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজের খবর অনুযায়ী, পুলিশের তদন্ত ও আটক হামাস সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের উপর ভিত্তি করে ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো বলছে অনুষ্ঠানটি ওই গোষ্ঠীর নিশানা ছিল না।

পুলিশ নিহত হামাস সদস্যদের কাছ থেকে তাদের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কিত একাধিক ছক (মানচিত্র) খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু সেগুলোর কোনোটিতেই অনুষ্ঠানস্থলের কথা পাওয়া যায়নি।

হারেৎজের খবর অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এ মূল্যায়নের পক্ষে আরো একটি অনুসন্ধান হলো হামাস সদস্যরা সীমান্ত এলাকা থেকে অনুষ্ঠানস্থলের দিকে সরাসরি আসেনি। ইসরায়েলের অভ্যন্তরের প্রবেশের পর কাছাকাছি একটি মহাসড়কের দিক থেকে তারা অনুষ্ঠানস্থলের দিকে অগ্রসর হন।

প্রতিবেদনে আরো দেখা গেছে, হামাস যখন উপস্থিত হয়েছিল এবং গণহত্যা শুরু করেছিল ততক্ষণে উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগই চলে গিয়েছিল।

আরও পড়ুন:- সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল

পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে হারেৎজ জানায়, 'রকেট হামলার চার মিনিট পর হামাস উৎসবে হামলার সিদ্ধান্ত নিতে নিতেই বেশিরভাগ (উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা) পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

পুলিশ তদন্তে আরো উঠে এসেছে, ইসরায়েলি একটি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে হামাসের হামলাকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। এতে উৎসবে অংশগ্রহণকারীদের কেউ কেউ গুলিবিদ্ধ হয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়নি।

নাম উল্লেখ না করে পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, তদন্তে দেখা গেছে, ইসরায়েলি একটি সামরিক হেলিকপ্টার রামাত ডেভিড ঘাঁটি থেকে ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। এতে উৎসবে অংশগ্রহণকারী কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়।

প্রতিবেদনটিতে হতাহতের সংখ্যা সংশোধন করে বলা হয়, এ হামলায় ১৭ জন পুলিশ সদস্যসহ ৩৬৪ জন নিহত হয়েছে। আগে এ সংখ্যাটি ২৭০ বলে জানানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে উৎসবস্থল থেকে ৪০ জনকে তুলে নিয়ে যায় হামাস।

আরও পড়ুন:- গাজায় ইসরায়েলি নতুন হামলায় ১৯ শিশুসহ এক পরিবারের ৩২ জন নিহত

হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় একটি স্থল ও বিমান হামলা শুরু করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, প্রায় দেড় মাস ধরে চলা এ হামলায় পাঁচ হাজার শিশুসহ ১২ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকার বেশিরভাগ অংশ। অবরুদ্ধ এ উপত্যকাটিতে প্রতিদিনই পর্যাপ্ত খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা কার্যক্রম চরম সংকটে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

আজও ফিলিস্তিনের খান ইউনূসসহ বিভিন্ন এলাকায় বিষ্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আল জাজিরা। এছাড়া কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়ে ৩১ জনকে হত্যা করেছে। জাতিসংঘ পরিচালিত একটি স্কুলে হামলা চালিয়ে কয়েক ডজন মানুষকে হত্যা করেছে।

গাজায় প্রতিদিনই ইসরায়েলি বর্বরতার হৃদয়বিদারক ঘটনা সামনে আসছে। এত কিছুর পরেও পশ্চিমারা বিনা দ্বিধায় ইসরায়েলকে সমর্থন করে যাচ্ছে।


মন্তব্য