বন্ধু রাষ্ট্র ভারতে যেভাবে ‘বয়কট বাংলাদেশ’ ছড়িয়ে পড়েছে!

ভারত
  © ফাইল ছবি

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই মুহূর্তে সবথেকে বড় ট্রেন্ডিং ‘বয়কট বাংলাদেশ’। ইন্ডিয়া অষ্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ ফাইনাল হওয়ার পরই দুই দেশে শুরু হয়েছে জোর ট্রোলিং। প্রতিবাদের ভাষা পাল্টে গিয়েছে অশ্লীলতায়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গোটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাসট্যাগে চলছে ‘বয়কট বাংলাদেশ’। এর জোয়ার যে এতদূর গড়াবে তা কে জানত। সেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই এবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয় দার্জিলিংয়ের এক হোটেল ব্যবসায়ী। এরপর সেই স্রোতে গা ভাসিয়েছে সিমিকের ও একাধিক হোটেল মালিক। 

রয়োপেরাস তক্তসং নামক একটি ফেসবুক পেজ তাদের ওয়ালে লিখেছেন, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য আমাদের হোটেলে বাংলাদেশি ট্যুরিস্টদের বুকিং বন্ধ রাখা হল।’ এরপরই শোরগোল পড়ে যায়। 

হোটেল মালিক রাম সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপর অতীতে বিভিন্ন ঘটে যাওয়া ঘটনার আউটবাস্ট এটা। বিশ্বকাপ এবং তারপর বাংলাদেশের বাসিন্দাদের ভারতকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন কটুক্তি তার জেরেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি। বাংলাদেশের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতা নেই। ইন্ডিয়া বাংলাদেশ খেলা হলে তাতে যদি বাংলাদেশ জয়লাভ করে তাহলে বাংলাদেশ ট্রোল করবে। সেটা খুব স্বভাবিক। 

ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের খেলাতেও তেমটাই হয়। কিন্তু সেটার মধ্যে একটা স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট থাকে। দুই পক্ষেই নানানরকম কথা বার্তা চলছে। কিন্তু বাংলাদেশ যেটা করছে সেটা শুধুমাত্র নোংরামি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বহু লেখক বহু গায়ক বহু সাংবাদিক আমার খুব পছন্দের। আমার মনে হয় শত্রুতার জায়গা তৈরি করছে বাংলাদেশ। পাকিস্থানের সাথে খেলা হলে তারা আমাদের দেশের শত্রুদের সাপোর্ট করবে, তারা অস্ট্রেলিয়াকে সাপোর্ট করবে। কিন্তু আমার তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু তারা শুধু সাপোর্ট করাতেই থেমে নেই, আমাদের দেশকে নিয়ে খুব বাজে কটূক্তি করে। যার প্রতিবাদ স্বরূপ আমরা দার্জিলিং, সিল্করুটসহ সিকিমে যে সমস্ত হোটেল রয়েছে আমাদের সেই সব হোটেলে বাংলাদেশের পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ করে দিয়েছি। পাশাপাশি তাদের অতীতেও অনেক ঘটনা রয়েছে , বাংলাদেশ থেকে ভিসার ছবি পাঠিয়ে তারা হোটেল বুক করে, তারপর আর তাদের কোনো পাত্তা থাকে না। কাজেই তাদের এই সমস্ত স্বভাবের জন্য আমরা আরও তাদের বাদ দিয়েছি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দার্জিলিংয়ের এক হোটেল ব্যাবসায়ী জানান, আমারা সংবাদ মাধ্যমে এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে কথা বললে সংগঠনের কাছে কৈফিয়ত দিতে হবে৷ কাজেই সংগঠনভাবে নয়, আমি বা আমার মত আরও অনেক হোটেল ব্যাবসায়ীরাই বাংলাদেশের পর্যটকদের বুকিং নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি৷ বাংলাদেশ থেকে হোটেল বুক করে তারা আর হোটেলে আসেন না। এই সমস্যা তাদের দীর্ঘদিনের৷ আমরা বহুবার ভুক্তভোগী। আবার হোটেলে এসে পৌঁছালেও তারা নিয়ম কানুনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। কাজেই ক্ষোভ অনেক আগে থেকেই। বর্তমান সময়ের ঘটনা তাদেরকে পাকাপাকিভাবে বাতিল করতে শুধুমাত্র সাহায্য করল। একজন ভারতীয় হিসেবে নিজের দেশের প্রতি এমন কুরুচির মন্তব্য গায়ে লাগবেই৷

একদিকে যেমন একাধিক হোটেল বাংলাদেশি পর্যটকদের বুকিং বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অন্যদিকে কিন্তু আবার ভিন্ন চিত্র লক্ষ করা গেল। হোটেল ব্যবসায়ী অর্জুন ছেত্রী জানান, অতিথি দেব ভব, আমরা পর্যটকদেরও সেই জায়গা থেকেই দেখি। তাদের বাতিল করার সিদ্ধান্ত বা সেই বিষয়ে চিন্তাধারা আমারা এখন গ্রহণ করিনি। সংগঠন যা ভাববে আমরা সেই সিদ্ধান্তই গ্রহণ করব। আগে থেকেই বাংলাদেশের পর্যটকদের নিয়ে সমস্যা রয়েছে। কিন্তু তাদের পাকাপাকিভাবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে হিমালয়ান হসপিটালিটি এন্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট স্যানাল জানান, এই বিতর্কিত বিষয় নিয়ে ‘নো কমেন্টস’।