রয়টার্সের বিশ্লেষণ
ভারতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিপুলভাবে ছড়িয়েছে মুসলিম বিদ্বেষি তথ্য
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:০৮ AM , আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:০৮ AM

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে ভারতে মুসলিম বিদ্বেষ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর ভারতে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। এতে বলা হয়, হামাসের হামলায় ১৭ জন ভারতীয় নিহত হয়েছেন। সেখানে নিহত ব্যক্তিদের তালিকাও দেওয়া হয়। এতে ভারতে তুমুল প্রতিক্রিয়া হয়। পরে দেখা গেল, এই তালিকা ভুয়া।
পরের কয়েক সপ্তাহ ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের সংঘাত ঘিরে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে অসংখ্য বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন তথ্য যাচাইকারী ও গবেষকদের নানা দলিলপত্র থেকে দেখা যায়, সংখ্যালঘু মুসলমানদের লক্ষ্য বানিয়ে এসব ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়েছে। এসব বেশির ভাগ বার্তায় হিন্দুদের সতর্ক করে বলা হচ্ছে, আগামী বছর অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) জয়ী না হলে মুসলমানদের দিক থেকে তাঁদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের নিরপেক্ষ তথ্য যাচাই-বাছাইকারী ভারত নায়েক বলেন, ‘প্রতিটি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনার উল্লেখ করে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, মুসলমানরা হচ্ছে শয়তান। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’ ভুয়া তথ্য ও ঘৃণ্য ভাষণ যাচাইকারী নায়েক বলেন, ‘যদি কোনো চলমান ঘটনা থাকে, তাহলে পুরো ঘটনার ভিডিও ও ছবি সামনে নিয়ে আসা হয় আর বলা হয়, হিন্দুদের নিরাপদ থাকতে হলে বিজেপিকে ভোট দিন।’
চিন্তক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক ডায়ালগ ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান অ্যান্টি-ডিফেশন লিগ জানায়, গত ৭ অক্টোবরের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ও এক্সে (সাবেক টুইটার) ইসলামবিদ্বেষী ও ইহুদিবিদ্বেষী বক্তব্য ব্যাপক হারে বেড়েছে।
তথ্য যাচাই-বাছাইকারী প্রতিষ্ঠান ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৪০ কোটি জনসংখ্যা-অধ্যুষিত ভারতে ১৪ শতাংশ মানুষ মুসলমান। আগামী বছরের মে মাসে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন ও নভেম্বরে চলমান বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচন ঘিরে মুসলমানদের লক্ষ্য করে ভুয়া তথ্য ও ঘৃণামূলক বক্তব্য ব্যাপক হারে বাড়ছে।
কাতারের হামাদ বিন খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক ওয়েন জোনস বলেন, নির্বাচনে এ ধরনের বয়ান ছড়ানো হয়ে থাকে। হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে এ ধরনের সংঘাতকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
ভুয়া তথ্য বিষয় নিয়ে পড়ানো এই সহযোগী অধ্যাপক বলেন, রাষ্ট্রের খেলোয়াড়েরা এ ধরনের বিভাজনমূলক বক্তব্য ও চাঞ্চল্যকর ভুয়া তথ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র টম ভেদাক্কানের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, বিজেপি এবং সরকার কোনো সম্প্রদায় বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্যকে উৎসাহিত করে না।
ভারতের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। গত এক দশকে বিজেপির শাসনামলে দলের ও মিত্রদের নেতাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছে, নেতাদের এসব বক্তব্য সহিংসতাকে উসকে দিয়েছে। হ্যাশট্যাগ #করোনাজিহাদ ও #লাভজিহাদ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়াও চুড়ি জিহাদ, বিরিয়ানি জিহাদ, সবজি জিহাদের মতো উদ্ভট জিহাদের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব হ্যাশট্যাগে করোনাভাইরাস ছড়ানোর জন্য মুসলমানদের দায়ী করা হয়েছে। আবার জোরপূর্বক হিন্দু নারীদের ধর্মান্তরিত করে বিয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে। আবার হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে শিশুকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ভুয়া তথ্য ছড়ানো হয়। এতে ভয়াবহ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছিল।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিজেপি তৃতীয় দফায় জয়ী হতে পারে। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে ওয়াশিংটনভিত্তিক এমন একটি সংগঠন হিন্দুত্ব ওয়াচ। তারা বলছে, গবেষকেরা দেখেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে মুসলমানবিরোধী ঘৃণামূলক বক্তব্য ছড়ানো হচ্ছে।