নাগরিকত্বের আবেদনে ইসরায়েলের স্বীকৃতি বাধ্যতামূলক করল জার্মানির রাজ্য

জার্মান-ইসরায়েল
  © ফাইল ছবি

জার্মানির পূর্বের রাজ্য সাক্সনি-আনহাল্ট বিদেশিদের নাগরিকত্বের আবেদনের ক্ষেত্রে নতুন শর্ত যুক্ত করেছে। আবেদনকারীকে এখন লিখিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে যে তিনি ‘ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকার স্বীকার করেন এবং রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিপক্ষে যেকোনো প্রচেষ্টার নিন্দা জানান’।

জার্মান দৈনিক ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এছাড়া টাইমস অব ইসরায়েল, জেরুজালেম পোস্ট, মিডল ইস্ট আই ও মিডল ইস্ট মনিটরের প্রতিবেদনেও অনুরূপ তথ্য পাওয়া গেছে। 

সাক্সনি-আনহাল্টের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তামারা জিশাং সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এ নির্দেশনার বিষয়ে অবহিত করেছেন। বাকি ১৫টি রাজ্যের প্রতিও একই নিয়ম আরোপের জন্য গত বুধবার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জার্মানির নাগরিকত্ব আইন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্ধারিত হলেও এর বাস্তবায়ন ১৬টি রাজ্যের সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করে। নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে ইসরায়েল–সংক্রান্ত একই ধরনের শর্ত আরোপের প্রস্তাব রয়েছে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্দেসটাগেও। সেখানে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলে পুরো জার্মানিতেই তখন নিয়মটি কার্যকর হবে।

জিশাং ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ইসরায়েলের ওপর গুরুত্বারোপ কোনো চাপ নয়; বরং ‘ইহুদিদের প্রতি ঘৃণা এবং ইহুদিবিদ্বেষ বাদ দিয়ে মানুষের মর্যাদা ও স্বাধীনতার অধিকার’ তুলে ধরার প্রচেষ্টা।

সাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের নতুন ডিক্রি এবং ফেডারেল পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা—দুই ক্ষেত্রেই বিষয়টিকে সামনে এনেছে মধ্য ডানপন্থী খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল সিডিইউ। ক্ষমতাসীনেরাসহ অন্য দলগুলোরও এতে সমর্থন রয়েছে।

তবে ইহুদিবিদ্বেষের (অ্যান্টিসেমিটিজম) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ উদ্যোগ কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে তিনদলীয় জোট সরকার। বরং সাক্সনি-আনহাল্টের পদক্ষেপ বিদ্যমান অস্থির পরিস্থিতিকে অপ্রয়োজনীয় মেরুকরণের দিকে ঠেলে দেবে বলে আশঙ্কা তাদের।

তবে জিশাং এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, এটি তাঁর রাজ্যে ইহুদিদের জীবনের ‘বিকাশের জন্য আরও সুযোগ করে দেওয়ার’ একটি উপায়।

বিদেশিদের লক্ষ্য করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ইহুদিসহ জার্মানির অন্য সংখ্যালঘুদের প্রতি বড় হুমকি মোকাবিলায় তা কাজে আসবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কেননা অপরাধের নিয়মিত পরিসংখ্যান বলছে, স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীদের কারণে সৃষ্ট হুমকি বিদেশিদের চেয়ে অনেক বেশি।

সাক্সনি-আনহাল্টেই ২০১৯ সালে সিনাগগে হামলায় দুজন নিহত হন। হামলাকারী ছিলেন একজন উগ্র ডানপন্থী জার্মান। ২০২০ সালে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়।

প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ না করাসহ নানা কারণে জার্মানিতে বছরে দুই হাজারের বেশি নাগরিকত্বের আবেদন বাতিল হয়। সাক্সনি-আনহাল্টে এরই মধ্যে নাগরিকত্বের বিপুল আবেদন জমা রয়েছে। রাজ্যের কোনো কোনো জায়গায় আবেদনের প্রক্রিয়া শেষ করতে দুই বছর বা এর বেশি সময় লাগে। অবশ্য এমন দেরির ঘটনা এখন গোটা জার্মানিতে স্বাভাবিক।