বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের ৮০ শতাংশই গাজার বাসিন্দা: জাতিসংঘ

গাজা
  © এপি ভায়া দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস

গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় অমানবিক, বর্বর ও নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। শুধু হামলা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি তারা, পুরো গাজা উপত্যকাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সেখানে খাদ্য, ওষুধ, পানি, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা সবকিছুর সরবরাহই ব্যাহত করেছে দেশটি। তাদের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না স্কুল, বেসামরিক ঘর-বাড়ি, শরণার্থী শিবির এমনকি হাসপাতাল-অ্যাম্বুলেন্সও।

ইসরায়েলি সেনাদের অব্যাহত হামলার কারণে দেশটিতে মানবিক সংকট ব্যাপকহারে বেড়েছে। সেনাদের বোমাবর্ষণের কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে পুরো গাজা উপত্যাকা। একইভাবে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের তালিকা।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিশ্বের ক্ষুধার্ত মানুষের ৮০ শতাংশই গাজার বাসিন্দা। দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলে ২৩ লাখ মানুষের বসবাস রয়েছে। যারা দুর্ভিক্ষ ও বিপর্যয়কর ক্ষুধার মুখোমুখি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজার প্রত্যেক মানুষই এখন ক্ষুধার্ত। তাদের মধ্যে চার ভাগের একভাগ মানুষ অনাহারে রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সেখানে পাঁচ বছরের নিচে তিন লাখ ৩৫ হাজার শিশু রয়েছে, যারা অপুষ্টিতে ভুগছে। উপত্যাকাজুড়ে ক্ষুধার্তদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সেখানে পুরো একটি জেনারেশন অপুষ্টির ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় নতুন করে ১৬৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৩৫০ ফিলিস্তিনি।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার কারণে আরও অনেকে পাথরের নিচে চাপা পড়ে আছেন। তবে তাদের কাছে উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেনি। এ ছাড়া গত ৭ অক্টোবর থেকে চলমান ইসরায়েলি হামলার কারণে এখন পর্যন্ত ২৪ হাজার ৪৪৮ জন নিহত হয়েছেন। এ সময়ে আহত হয়েছেন আরও ৬১ হাজার ৫০৪ জন।

তবে শুধু গাজায় নয়, ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরেও হামলা ও দখলদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। পশ্চিম তীরে হামলার ঘটনায় পশ্চিমারা নিন্দা জানালেও অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে দেশগুলি।

এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নির্মূলে ইসরায়েল যে সামরিক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে তাতে কোনও কাজ হবে না বলে মন্তব্য করেছে আমেরিকা।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ইতোমধ্যে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন।

ব্লিংকেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, “হামাসের কোনও সামরিক সমাধান নেই। ইসরায়েলি নেতাকে (বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) তা স্বীকার করতে হবে। অন্যথায় ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।”

সবশেষ মধ্যপ্রাচ্য সফরে ব্লিংকেন নেতানিয়াহুকে এসব কথা বলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি।

তবে ব্লিংকেনের এই কথা শোনার পরও নেতানিয়াহু তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন বলে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, গাজা পুনর্গঠন ও স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রস্তাবও প্রস্তাব করেছেন বলে জানা গেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রতি ক্রমেই হতাশ হচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। সেই সঙ্গে নেতানিয়াহু-পরবর্তী সরকারের ভিত্তি গঠনে অন্যান্য ইসরায়েলি ও সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে।

এরই অংশ হিসেবে এবং নেতানিয়াহুকে ঘিরে কাজ করার প্রয়াসে, ব্লিংকেন ব্যক্তিগতভাবে ইসরায়েলি যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য এবং বিরোধী নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিড-সহ অন্যান্য ইসরায়েলি নেতাদের সাথে দেখা করেছেন। 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরা, আরব নিউজ