দিল্লি বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ালেন বাংলাদেশি যুবক!

বিমানবন্দরে
  © সংগৃহীত

স্ত্রীর কাছে মিথ্যা বলে ধরা পড়ার ভয়ে ভারতের দিল্লি বিমানবন্দরে বোমাতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগে, ২৯ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি যুবককে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে বিস্ফোরক নিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে ভুয়া ই-মেইল পাঠানোর অভিযোগে তাকে ধরা হয়। বর্তমানে দিল্লি পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়েছে।

জানা গেছে, ওই বাংলাদেশির নাম নজরুল ইসলাম। তিনি স্ত্রীর কাছে মিথ্যা বলে ধরা পড়ার ভয়েই ভুয়া ইমেইল করে দিল্লি বিমানবন্দরের বোমাতঙ্ক ছড়ান। গত ২৭ ফেব্রুয়ারির এ ঘটনার জেরে তদন্ত করে দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা ও স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। পরে সোমবার (৪ মার্চ) কলকাতার নিউমার্কেটের একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করা হয় অভিযুক্ত নজরুল ইসলামকে।

দিল্লি পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডের নিরাপত্তা কর্মকর্তার কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানায় একটি অভিযোগ পাওয়া যায়।
 
ওই অভিযোগে বলা হয়, একটি হুমকির ই-মেইল পাওয়া গেছে, যাতে লেখা রয়েছে, কেউ একজন বিস্ফোরক বহন করছেন। যাতে প্রতিটি ব্যাগ ও লাগেজ তল্লাশি করা হয়। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে বিমানবন্দরে উচ্চ সতর্কতা এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। পরে জানা যায়, ই-মেইলটি ছিল ভুয়া। তদন্তকালে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি (নজরুল) নতুন একটি ই-মেইল ঠিকানা তৈরি করে মেইলটি পাঠান।
 
দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তা রাংনানি বলেন, আমরা ওয়াইফাই পরীক্ষা করি। দেখা যায় সেটি কলকাতার একটি হোটেলের সেটি। হোটেলটিতে ৪০ জন অতিথি ছিলেন। সবাই একই ওয়াইফাই ব্যবহার করছেন। তাদের প্রায় সবাই বাংলাদেশি নাগরিক ছিলেন।

দিল্লি পুলিশ আরও জানায়, নজরুল ইসলাম ভুয়া ইমেইল পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে গবেষণার কাজে যুক্ত রয়েছেন তিনি, এমন মিথ্যা কথা বলে ২০২৩ সালে সোনিয়া নামের ভারতের নয়াদিল্লির এক নারীকে বিয়ে করেন। পাঞ্জাবের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়ার সময়, ওই নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় তার। মাস্টার্স শেষে ২০২০ সালে নজরুল বাংলাদেশে ফিরে যান। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের যোগাযোগ ছিল। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে বিয়েও করেন তারা।
 
পুলিশ আরও জানায়, আত্মীয় যাতে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে কলকাতায় পৌঁছাতে না পারেন, সেজন্য তিনি ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলেন। নজরুল ইসলামকে ট্রানজিট রিমান্ডে দিল্লি নেয়া হয়েছে এবং ভুয়া ই-ইমেইল পাঠানোর দায়ে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
 
দিল্লি পুলিশ কর্মকর্তা রাংনানি জানান, নজরুল ইসলাম দাবি করেছেন, তিনি এভিয়েশনের ওপর একটি কোর্স করেন। পাওনাদারদের কাছ থেকে বাঁচতে তিনি ভারতে থাকছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর থেকে নজরুলের স্ত্রী সোনিয়া তাকে, বারবার যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার কথা বললে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে শুরু তিনি। এমনকি স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন দিল্লিতে চলমান কৃষক আন্দোলনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরতে পারছেন না! আটকে পড়েছেন কলকাতায়। এতেই সন্দেহ হয় সোনিয়ার। গত মাসের ২৭ তারিখ সোনিয়া তার ভাই অমর দীপ কুমারকে কলকাতায় নজরুলের থাকার বিষয়টি সত্যতা যাচাই করতে পাঠাতে চায়। এই কথাটি আগেভাগেই জেনে যায় নজরুল। শ্যালককে দিল্লি বিমানবন্দরেই আটকে দিতে, দিল্লি থেকে কলকাতাগামী স্পাইসজেটের ফ্লাইটে, এক যাত্রী বোমা বহন করছেন বলে দিল্লি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে ভুয়া ইমেইল পাঠান। আর এতেই বোমাতঙ্ক ছড়ায় বিমান বন্দরজুড়ে।
 
পুলিশ জানায়, নজরুল কলকাতার নিউমার্কেটের হোটেলটিতে প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে ছিলেন। স্ত্রীকে মিথ্যা বলার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আনা প্রায় ৫০ লাখ টাকা প্রতারণা করে লুকিয়ে রাখতেই কলকাতায় থাকেন, বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন তিনি। অভিযুক্ত নজরুলের পাসপোর্ট, ফোন এবং ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।