খাবারের অভাবে লন্ডনে রোজা রেখে দিন পার বাংলাদেশি পরিবারের

আন্তর্জাতিক
  © সংগৃহীত

হাতে নেই খাওয়ার টাকা। লন্ডনে বসবাসরত একটি বাঙালি পরিবার গত এক সপ্তাহ থেকে রোজা রেখে দিন পার করছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে কাজের আকুতি জানিয়ে পোস্ট করেছেন ওই পরিবারের এক শুভাকাঙ্ক্ষী। 

ব্রিটেনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং হোয়াটস অ্যাপের বাঙালি কমিউনিটির গ্রুপগুলোতে এখন কাজের জন্য এমনই হাহাকার চলছে। কোনমতে খেয়ে বাঁচার আকুতি জানিয়ে একটি কাজের সন্ধান দিতে মিনতি করছেন অনেকেই। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন কাজ পেলেও চলবে এমন পোস্টও করছেন কেউ কেউ। 

মোহাম্মদ হাবিব নামের এক ব্যক্তি তার পোস্টে লিখেছেন, আমার পরিচিত এক ভাই তিন মাস আগে লন্ডনে এসেছেন। কোনো কাজ নেই। হাতে টাকা না থাকায় এক সপ্তাহ ধরে রোজা রেখে দিন পার করছেন। যদি কারও কাছে হ্যান্ড ক্যাশ কাজ থাকে তাহলে জানাবেন প্লিজ। লোকটা খুব অসহায়।

একইভাবে একটি কাজের আকুতি জানিয়ে পোস্ট করেছেন আবেহা ফারিন নামের একজন। তিনি তার পোস্টে লিখেছেন, আমি শারীরিক-মানুষিক কষ্টে আছি। এই দেশে (লন্ডন) কেউ কারও কান্না দেখে না। কেউ যদি আমাকে ক্যাশ ইন হ্যান্ড জবের ব্যবস্থা করে দিতেন আমি উপকৃত হতাম। রেস্টুরেন্টের কাজ; যেকোনো জায়গায় হলেও চলবে। শুধু একটি কাজ দরকার। 

জানা গেছে, গত তিন বছরে ছাত্র ও কাজের ভিসায় পরিবার নিয়ে ব্রিটেনে এসেছেন কয়েক হাজার বাংলাদেশি। এদের বড় অংশই বসবাস করেন লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায়। রাজধানী লন্ডনেই দেশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজের সু‌যোগ থাকলেও এ শহ‌রে মাসের পর মাস কাজ না পেয়ে বেকার হাজারো বাংলাদেশি। ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কাজের জন্য হাহাকার। চেনা-পরিচিত পর্যায়ে যোগাযোগ করেও মিলছে না কাজ। হাজা‌রো বাংলাদেশি দেশ থে‌কে আসার পরও মাসের পর মাস বেকার। বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি ক‌মিউনি‌টি‌তে অবস্থা প্রায় একই।
 
ফেসবুকে বাংলাদেশি কমিউনিটির একটি গ্রুপে নাম প্রকাশ না করে, সহযোগিতা চেয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন লন্ডনে আসা এক বাংলাদেশি। তিনি লিখেছেন, অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে এ দেশে এসেছিলাম কেয়ার ওয়ার্কার ভিসায়। এখন দু-বেলা খাওয়া আর একটা ছাদের নিচে থাকাটাই বড় স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঁচ মাস ধরে আমি মেইন অ্যাপ্লিকেন্ট, কিন্তু আমার কোনও কাজ নেই। হন্যে হয়ে রেস্টুরেন্ট, কন্সট্রাকশন, অ্যাগ্রিকালচার সাইটে কাজ খুঁজেছি, কিন্তু পাইনি। আমার স্ত্রী ডিপেনডেন্ট হিসেবে আসার পর শুধু এক মাস হাউজকিপিংয়ের জব করেছিলেন, এখন বেকার।

তবে কেনো এই কাজের অকাল খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, কেয়ার ও ছাত্র ভিসায় ব্রিটেনে পাড়ি জমানো হাজার হাজার বাংলাদেশি এই দেশে আসার পর নিজের গন্তব্য ঠিক রাখতে পারেননি। দালালদের খপ্পরে পড়ে ভিটা মাটি বিক্রি করে এই দেশে আসার পর চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন। দালালরা কাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আনলেও পরবর্তীতে কোন যোগাযোগই রাখছেন না তাদের সঙ্গে। ফলে অসহায় হয়ে এই দুয়ার ওই দুয়ারে ঘুরছেন মানুষ। এই সংখ্যা হাতে গোনা দুই একজন নয়; হাজারে হাজার। ফলে কাজের সংখ্যার তুলনায় কর্মীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কাজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। 

এছাড়া দেশ থেকে যারাই লন্ডনে এসেছেন বেশিরভাগেরই কারিগরি কোন দক্ষতা নেই। যার ফলে এই দেশে (লন্ডনে)  আসার পর বেশিরভাগই কোন না কোন রেস্টুরেন্টে কাজ খুঁজেন। বর্তমানে এই সেক্টরে কাজের মানুষের অভাব নেই। ফলে নতুন যারা এসেছেন তারা কাজ পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে রেস্টুরেন্ট মালিকেরা বলছেন, ব্রিটেনের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে দক্ষ কুক, তান্দুরি সেফ বা দক্ষ ওয়েটার দরকার। কিন্তু কাজ সন্ধানী কেউই দক্ষ না। ফলে তাদের কাজ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।  

এ বিষয়ে  বাংলা প্রেসক্লাব বার্মিংহাম মিডল্যান্ডের সভাপতি মোহাম্মদ মারুফ বলেন, ‌‘একসময় মানুষ বাংলাদেশ থেকে লন্ডনে আসার পর কাজের অভাব হতো না। কারণ এই দেশে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টগুলোতে কাজের সুযোগ থাকতো। তবে সম্প্রতি অতিরিক্ত মানুষ ব্রিটেনে পাড়ি জমানোর পর এই সেক্টরের ওপর চাপ বেড়েছে। ফলে কাজের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রায় অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে ফুল স্টাফ। নতুন কাউকে নেওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া করোনা পেন্ডামিকের পর রেস্টুরেন্ট গুলো বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। যার কারণে অনেক রেস্টুরেন্টে কর্মী সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে।’

সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি সাড়ে ৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি সাড়ে ৫ হাজারের বেশি বাংলাদেশি 
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ‘ব্রিটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লন্ডন শাখা’র প্রেসিডেন্ট মনির আহমেদ বলেন, যুক্তরাজ্যের ভিসা নীতি শিথিল হওয়ার পর অসংখ্য মানুষ এদেশে এসেছেন। আসার পর অনেকেই বেকার। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। নিদারুণ কষ্ট করছেন। আমার কাছেও অনেকে কাজের সন্ধানে আসেন। চেনা পরিচিত পর্যায়ে যোগাযোগ করার সাধ্যমত কাজ দেওয়ার চেষ্টা করি। আমার প্রতিষ্ঠানেও প্রয়োজনের তুলনায় অধিক মানুষ রেখেছি।

 


মন্তব্য