ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করলো গাজাবাসী

ঈদ
  © সংগৃহীত

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। বরাবরের মতো এবারও বিশ্বজুড়ে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও উৎসবমুখর পরিবেশে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের প্রধান এই ধর্মীয় উৎসব পালিত হচ্ছে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মতো ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডেও পালিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর। তবে সেখানে বাকি বিশ্বের মতো নেই ঈদের আনন্দ, আছে ধ্বংসযজ্ঞ, মানুষের মৃত্যু, আর আছে প্রিয়জন হারানোর বেদনা।

এর মধ্যেই ঈদ উদযাপন করছেন ফিলিস্তিনিরা। এমনকি গাজায় ধ্বংসপ্রাপ্ত মসজিদেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন তারা। আজ বুধবার (১০ এপ্রিল) এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ফিলিস্তিনিরা বুধবার গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের আল-ফারুক মসজিদের ধ্বংসাবশেষে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছে। মসজিদের ধ্বংসাবশেষে ফিলিস্তিনিদের ঈদের নামাজের ছবিও সামনে এসেছে।

সেখানে বুধবার সকালে রাফাহ শহরের ওই মসজিদের ধ্বংসাবশেষের পাশেই ফিলিস্তিনিদের ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে দেখা যায়।

এদিকে গাজার রাফাহতে ঈদের দিনও ইসরায়েলি ড্রোন সেখানকার আকাশে চক্কর দিচ্ছে। আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েলি সামরিক ড্রোনগুলো এখনও (রাফাহ) জেলার এই অংশে চক্কর দিচ্ছে। আর এর লক্ষ্য শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিদের এটিই মনে করিয়ে দেওয়া যে, আনন্দ ও উদযাপনের এমন দিনেও তাদের জন্য নিরাপত্তা বলে কিছু নেই।

তবুও, এই নিরাপত্তাহীনতাকে পেছনে ঠেলেই ফিলিস্তিনিরা আজ রাফাহতে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। এছাড়া নিজেদের চারপাশে ঘটে যাওয়া ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ, দুঃখ, আর্তনাদ ও শোকের মধ্যেও ফিলিস্তিনিরা একত্রিত হচ্ছেন (এবং) একে অপরকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

এর আগে ফিলিস্তিনিরা যখন ঈদের আনন্দের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, ঠিক সেসময়ই মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো গাজার বেশ কয়েকটি আবাসিক বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়।

মঙ্গলবার বিকাল থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নিহত হয়েছে ১২৫ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে আরও ৫৬ জন।

এর মধ্যে একটি হামলা চালানো হয় নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে। মারাত্মক এই হামলায় অন্তত ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের চারজনই শিশু।

এছাড়াও ঈদের দিনে গাজা উপত্যকায় ইসরাইল হামলায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের সর্বোচ্চ নেতা ইসমাইল হানিয়ার তিন ছেলে নিহত হয়েছে।

ইসরাইলি হামলায় নিহত তিন ছেলে হলো হাজেম, আমির এবং মোহাম্মদ হানিয়া। গাজা সিটির শাতি উদ্বাস্তু শিবিরের কাছে হামলায় পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়। ইসমাইল হানিয়া বর্তমানে কাতারে নির্বাসিত জীবনযাপন করলেও তিনি মূলত শাতি এলাকার লোক। তিনি আল জাজিরার সাথে এক সাক্ষাতকারে তার তিন সন্তান নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ইসরাইলি হামলায় তার এক নাতিও নিহত হয়েছে। যুদ্ধে এ পর্যন্ত তার আরো অনেক স্বজন নিহত হয়েছে বলেও তিনি জানান।

হামাস নেতা বলেন, 'শহিদদের রক্ত এবং আহত হওয়ার যন্ত্রণা দিয়ে আমরা আশা, সৃষ্টি করছি, ভবিষ্যত সৃষ্টি করছি, আমরা আমাদের জনগণ ও আমাদের জাতির জন্য স্বাধীনতা এবং মুক্তি নিশ্চিত করছি।'

হানিয়া আল জাজিরাকে বলেন, তার সন্তানরা উত্তর গাজার শাতি ক্যাম্পে স্বজনদের সাথে দেখা করতে গেলে হত্যার শিকার হয়।

তিনি ইসরাইলের নির্মমতা তুলে ধরেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি নেতাদের পরিবার ও বাড়িঘর টার্গেট করা হলেও তারা ভেঙে পড়বেন না।

তিনি বলেন, সন্দেহাতীত ব্যাপার হলো, শত্রুরা প্রতিশোধের নেশায় চালিত। তারা হত্যা ও রক্তপিপাসায় মত্ত। তারা কোনো মানদণ্ড বা নিয়ম মানে না।

তিনি বলেন, যুদ্ধের শুরু থেকে তার পরিবারের ৬০ জন নিহত হয়েছে।

হানিয়া বলেন, আমরা গাজায় সব আইন লঙ্ঘন হতে দেখেছি। এটা হলো জাতি নির্মূল এবং গণহত্যার যুদ্ধ। এটা হলো গণবাস্তুচ্যুতি।

সূত্র : আল জাজিরা, আরব নিউজ


মন্তব্য