ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশ নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টপ্রার্থী গ্রেপ্তার

বিক্ষোভ
  © সংগৃহীত

গাজায় ইসারাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদ ও যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে শনিবার ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ থেকে দেশটির গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জিল স্টেইনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

তার নির্বাচনী প্রচারণা মুখপাত্র বলেন, 'এই মুহূর্তে তার বিরুদ্ধে আনা কোনো অভিযোগ সম্পর্কে আমরা অবগত নই।'

স্টেইন শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে সমর্থন করে এতে অংশ নিয়েছিলেন।

এদিন পুলিশ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল, জিল ছিলেন তাদের মধ্যে একজন।

গ্রেপ্তারের আগে ধারণ করা একটি ভিডিওতে গ্রিন পার্টির এই প্রার্থী বলেন, তিনি শিক্ষার্থীদের এবং তাদের বাক স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন।

স্টেইন বলেন, 'আমরা এখানে সেই শিক্ষার্থীদের কাতারে দাঁড়াতে যাচ্ছি, যারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াচ্ছে, গণহত্যা বন্ধে রুখে দিতে দাঁড়াচ্ছে।'

জিল স্টেইনের কমিউনিকেশন ডিরেক্টর ডেভিড শোয়াব বলেছেন, স্টেইন শনিবার বিকালে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ 'প্রতিক্রিয়া জানায়নি' এবং এর কিছুক্ষণ পরেই গ্রেপ্তার শুরু করে।

শোয়াব বলেন, 'ড. স্টেইন বলেছেন, এটা লজ্জাজনক যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের নিজেদের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগকে সমর্থন করছে। অথচ শিক্ষার্থীরা শুধু শান্তি, মানবাধিকার এবং আমেরিকান জনগণ ঘৃণা করে এমন গণহত্যা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছে।'

স্টেইনের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ও ডেপুটি ক্যাম্পেইন ম্যানেজারকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিক্ষোভকারীরা, যেসব কোম্পানি ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত তাদেরকে বয়কট করার দাবি করেছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কয়েকজন ইহুদি ছাত্র অভিযোগ করেছে যে, কিছু বিক্ষোভকারী ‘কথিত ইহুদি বিদ্বেষ’ ছড়াচ্ছে।

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট পলিটেকনিক ঘোষণা করেছে যে, তারা অনলাইনে পাঠদান করবে। কারণ, বিক্ষোভে শিক্ষাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টন শহরের এমারসন কলেজ থেকে প্রায় ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসেও বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সেখানে ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে গত সপ্তাহ থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে প্রথম বিক্ষোভে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। সেখানে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন মার্কিন স্পিকার মাইক জনসন।

ইসরাইল বিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের দ্য ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া (ইউএসসি) তার প্রধান স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করেছে। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাতিল করা হয়েছে অনুষ্ঠানটি। আগামী ১০ মে এটি হওয়ার কথা ছিলো।

বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদকারীদের একটি ছাউনি পুলিশ ভেঙে দেয় এবং বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করে। এমন পরিস্থিতিতে বাতিল করা হয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গ্রাজুয়েশন অনুষ্ঠান। নিরাপত্তা বাতিল করা হয় মুসলিম শিক্ষার্থী আসনা তাবাসসুমের ভাষণ।

আটলান্টার ইমোরি ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা স্থান ছাড়তে রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার ২৮ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইমোরি ইউনিভার্সিটির প্রতিবাদকারীরা জানান, তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের বিক্ষোভ আয়োজন করছে।

ফিলিস্তিনপন্থী এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। 


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ