১৯ মে ২০২৪, ২১:১২

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর পুলিশের বর্বরতা

  © সংগৃহীত

গত ৭ মাসের অধিক সময় ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংস হামলা চালাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। তাদের বর্বর হামলায় ৩৫ হাজার ৩৮৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু। আর ইসরায়েলের এই গণহত্যায় সাহায্য করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তবে ফিলিস্তিনপন্তী এসব বিক্ষোভকারীদের ওপর চলছে পুলিশের বর্বরতা। 

এক যুবককে উপুড় করে ফেলে পিচঢালা সড়কের সঙ্গে চেপে ধরে আছেন ৫-৬ পুলিশ। এ সময় তাকে একাধারে ঘুসি মারতে থাকেন তারা। একইভাবে অন্য বিক্ষোভকারীদের ওপরও ঘুসি ও লাথি মারতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কাউকে আবার সাইনপোস্টের ওপর ছুড়ে ফেলেন তারা। এমন বর্বর দৃশ্যই দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে। যেখানে বৃষ্টির মধ্যেই শত শত মানুষ ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলা বন্ধ ও নাকবা দিবস উপলক্ষে বিশাল সমাবেশ করেন। বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, এপি ও আল জাজিরার।

শনিবার ব্রুকলিন ছাড়াও দেশটির রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশাল সমাবেশ করেন শত শত মানুষ।

নাকবা হলো- ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বর আক্রমণ। যেটিকে নাকবা বা বিপর্যয় বলে প্রতিবছর পালন করে থাকেন ফিলিস্তিনিরা। ওই হামলায় প্রায় ৭ লাখ ফিলিস্তিনি নিজ ভূখণ্ড ছাড়তে বাধ্য হন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ব্রুকলিনের বে রিজ এলাকায় বিক্ষোভকালে অন্তত তিনজনকে ঘুসি মারছেন পুলিশ অফিসাররা। এ সময় একজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যান তারা।

বিক্ষোভকারীদের ওপর এমন বর্বরভাবে বলপ্রয়োগের বিষয়ে অবশ্য কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পুলিশের এক মুখপাত্র।

বিক্ষোভের আয়োজক ফিলিস্তিনিদের সংগঠন উইদিন আওয়ার লাইফটাইমের প্রতিষ্ঠাতা নারদেন কিসওয়ানি বলেন, ‘আমি দেখেছি পুলিশ নির্বিচারে রাস্তা ও ফুটপাত থেকে লোকজনকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।’

বিগত বছরগুলোতেও এখানে একইভাবে বিক্ষোভ করেছেন ফিলিস্তিনকে সমর্থনকারীরা। কিন্তু এবার গাজা যুদ্ধ ঘিরে নিউইয়র্কে কয়েক মাসের বিক্ষোভের কারণে শুরু থেকেই কঠোর ছিল প্রশাসন।

শনিবার দুপুর ২টায় পঞ্চম ও বে রিজ অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে সমাবেশ শুরু হয়। প্রায় ২৫ মিনিট সমাবেশ চলার পর পুলিশের একটি বড় দল এসে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে। তাদের সতর্ক করা হয়, যারা রাস্তায় থাকবে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।

সাংবাদিক কেটি স্মিথের তোলা এক ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা শার্ট পরা এক পুলিশ কমান্ডার ফুটপাতে শুইয়ে ফেলা একজনকে তিনটি ঘুসি মারেন। অন্য এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক পুলিশ মাটিতে পড়ে থাকা একজনকে অন্তত ছয়টি ঘুসি মারেন। এক সাদা পোশাক পরা কমান্ডার লোকটিকে লাথি মারেন।

অন্য সাংবাদিক তালিয়া জেনের তোলা ছবিতে দেখা যায়, এক পুলিশ অফিসার প্রথমে এক প্রতিবাদকারীকে ছুড়ে ফেলেন সাইনপোস্টের ওপর। তারপর তাঁকে ফুটপাতের দিকে ছুড়ে ফেলেন, যেখানে তাকে তৃতীয়জন ঘুসি মারেন। এরপর আরও দুই অফিসার তাঁকে চেপে ধরেন। বিক্ষোভকারীদের মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।   

অন্যদিকে, ওয়াশিংটন ডিসিতে শত শত বিক্ষোভকারী ইউএস ক্যাপিটলের কাছে সমাবেশ করেছে। এ সময় তারা ফিলিস্তিনের সমর্থনে স্লোগানের পাশাপাশি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমালোচনা করেন। বিক্ষোভে অন্তত ৪০০ লোক টানা বৃষ্টির মধ্যে সমাবেশ করেন।

শনিবারের সমাবেশে স্বাধীন ফিলিস্তিন ও গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপরও ক্ষোভ ঝাড়েন।