এমপি আনার হত্যাকাণ্ড; যা জানালো কলকাতা পুলিশ

আনার
  © সংগৃহীত

৮ দিন আগে নিখোঁজ হওয়া ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে কলকাতা পুলিশ। এ বিষয়ে কলকাতা সিআইডির আইজি অখিলেশ চতুর্বেদি আজ বুধবার (২২ মে) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আজীমকে হত্যার আলামত তাঁরা পেয়েছেন।

অখিলেশ চতুর্বেদি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জানান, ‘যে ফ্ল্যাটে হত্যাকাণ্ড হয়েছে সেই ফ্ল্যাটের মালিকের নাম সঞ্জীব রায়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের এক্সাইজ (শুল্ক) দপ্তরের কর্মকর্তা।’

অখিলেশ চতুর্বেদিকে উদ্ধৃত করে বিবিসি বাংলা জানায়, ‘আখতারুজ্জামান নামে এক মার্কিন নাগরিককে সঞ্জীব রায় ফ্ল্যাটটি ভাড়া দিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ভিকটিম বা অভিযুক্তদের কী সম্পর্ক, কলকাতা পুলিশ এখনো সেটি খুঁজছে।’

এদিকে বুধবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ধানমণ্ডিতে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এমপি আনোয়ারুল আজীমকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরই মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, কলকাতার নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আজীমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে , সেখানে পুলিশ কোনো লাশ খুঁজে পায়নি। কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনকে এ তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে কলকাতায়ও এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বিধান নগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার মানব শ্রিংলা বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে ক্যাবচালক জানিয়েছে ১৩ মে যে ব্যক্তিকে সে গাড়িতে তুলেছিল তাকে এই অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে নামিয়ে দেয়।’

এমপি আজীম হত্যা: শেরে বাংলা নগর থানায় মেয়ের মামলা এমপি আজীম হত্যা: শেরে বাংলা নগর থানায় মেয়ের মামলা 
এমপি আজীম নিখোঁজের ঘটনায় কলকাতা সংলগ্ন সিঁথি পুলিশ স্টেশনে একটি জিডি করা হয়। সেখানকার এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সঞ্জিবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটের ভেতরেই হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সেখানে রক্তের দাগ ও অন্যান্য প্রমাণ রয়েছে। ১৩ মে ওই এমপির সাথে তিনজন সেখানে ঢুকেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, তিনজনের প্রত্যেকেই পৃথক পৃথকভাবে ওই ফ্ল্যাট থেকে বের হয়েছে। ১৫ মে একজন, ১৬ মে আরেকজন এবং ১৭ মে আরেকজন বের হয়েছেন সেখান থেকে। তিনজনের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন।

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অ্যান্টি টেররিস্ট ইউনিটের কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তের শুরুতেই তাঁরা প্রথমে এমপি আনোয়ারুল আজীমকে বহনকারী ক্যাবচালককে আটক করেন। সেই ক্যাবচালক তাঁদের জানিয়েছেন, আজীমকে তাঁর গাড়িতে তোলার পর আরও তিনজন গাড়িতে ওঠেন। তাঁদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। পরে এই চারজন কলকাতা নিউটাউনের ওই বাড়িতে যান।

এটিএফ কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, এদের মধ্যে পুরুষ দুজন বাংলাদেশে ফিরে যান। বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগকে জানানো হলে তাঁরা দুজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাঁদের দেওয়া তথ্য কলকাতার পুলিশকে জানানো হয়। এরপরই এমপি আনোয়ারুল আজীমের মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আজীম চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন। এটা মার্ডার, খুন হয়েছে। এর নেপথ্যের বিষয় আপনাদের জানাব। যাদের আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের নেপথ্য কারণ জানা যাবে। তদন্তের স্বার্থে অনেক কিছুই জানাচ্ছি না। সব উদ্ধার করব আমরা।’

এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদও সাংবাদিকদের ব্রিফ করেছেন। তিনি বলেছেন, পারিবারিক, ব্যবসায়িক নাকি আর্থিক কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা খতিয়ে দেখা হবে। ভারতীয় পুলিশের সাথে প্রতি মুহূর্তেই কথা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে সেসব বিষয় বলতে চাচ্ছি না।


মন্তব্য