যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের বন্ধুত্বে কি চিড় ধরছে?

ভারতে
  © ফাইল ফটো

ভারতের বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। এ সফরে ভারতীয় প্রবাসী ছাড়াও মার্কিন আইনপ্রণেতা ও ব্যবসায়ীসহ দেশটির শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। বিশেষ করে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি ইলহান ওমরের সঙ্গে তার বৈঠক নিয়ে তোপ দাগছেন ভারতের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। ভারতের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, রাহুল গান্ধী যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন, যা নিয়ে ভারতের সরকারি মহলে তুমুল সমালোচনা চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমরের সঙ্গে বৈঠকের পর বিজেপি নেতারা কংগ্রেস নেতা এবং লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধীর কঠোর সমালোচনা করেছেন। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ করেছেন।

ইলহান ওমরকে ভারতের অনেক জাতীয়তাবাদী নেতা পছন্দ করেন না। তাকে এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেছে; বিশেষ করে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে। ইলহানের বিরুদ্ধে একাধিকবার ভারতবিরোধী বক্তব্যের অভিযোগ এনেছে বিজেপি।
 
ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিক নিবন্ধন (এনআরসি) নিয়েও প্রতিবাদ করেছিলেন ইলহান ওমর। এছাড়া পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে সফরে গিয়ে ওই অঞ্চলকে ‘আজাদ কাশ্মীর’ বলে মন্তব্য করেছেন। বিদেশ সফরে গিয়ে মার্কিন এ আইনপ্রণেতার সঙ্গে রাহুল গান্ধীর সাক্ষাৎকে ভালোভাবে নেয়নি শাসকদল বিজেপি।
 
বিজেপির আইটি সেলের প্রধান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে ইলহান ওমরকে ভারতবিরোধী কণ্ঠস্বর, একজন উগ্র ইসলামপন্থি এবং স্বাধীন কাশ্মীরের প্রবক্তা বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, দেশের বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী যুক্তরাষ্ট্রে ইলহান ওমরের সঙ্গে দেখা করেছেন। ওমর হলেন পাকিস্তানি মদদপুষ্ট ও ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত। তিনি কট্টরপন্থি আজাদ কাশ্মীরের সমর্থক। কংগ্রেস কি এবার প্রকাশ্যে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত হয়েছে?

বিজেপির আরেক মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালাও রাহুল গান্ধীর কড়া সমালোচনা করেছেন। ইলহানের একাধিক ভারতবিরোধী কার্যকলাপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘শিখদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো এবং বিদেশের মাটিতে ভারতকে ছোট করার পর এখন রাহুল গান্ধী ভারতবিরোধী ইলহান ওমরের সঙ্গে দেখা করলেন। প্রশ্ন হলো, কেন প্রতিটি বিদেশ সফরে ভারতবিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাহুল। বিজেপির বিরোধিতা করতে গিয়ে কি দেশবিরোধিতা শুরু করেছে কংগ্রেস?’

বিজেপির মুখপাত্র প্রদীপ ভান্ডারি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানপন্থি ইলহান ওমরের সঙ্গে রাহুল গান্ধীর বৈঠক প্রমাণ করে যে, তিনি পাকিস্তানপন্থিদের সমর্থন করেন। তার অভিযোগ, ভারতবিরোধী উপাদানকে সমর্থন করে কংগ্রেস ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আপস করছে।
 
রাহুল গান্ধীর তিনদিনের যুক্তরাষ্ট্র সফরে দেশটিতে বসবাসকারী ভারতীয় প্রবাসী , ব্যবসায়ী ও মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি একাধিক কর্মসূচি ছিল। জানা গেছে, ওয়াশিংটন ডিসিতে একাধিক মার্কিন আইনপ্রণেতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এদের মধ্যে কংগ্রেস সদস্য জোনাথন জ্যাকসন, রো খান্না, রাজা কৃষ্ণমূর্তি, বারবারা লি, শ্রী থানাদার, জিসাস জি ‘চুই’ গার্সিয়া, ইলহান ওমর, হ্যাঙ্ক জনসন এবং জান শাকোস্কি অন্যতম।
 
সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএনআই এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সফরে দেশটির দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও কংগ্রেসওম্যান প্রমিলা জয়পালের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি।

সূত্র মতে, লুর ভারত ও বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে ৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে এ বৈঠক হয়। এছাড়া, তিনি প্রমিলা জয়পাল এবং মার্কিন হাউজের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন।
 
এনডিটিভি বলছে, লোকসভায় বিরোধীদলীয় নেতা হওয়ার পর রাহুল গান্ধীর যুক্তরাষ্ট্রে এটাই ছিল প্রথম সফর। রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস মূলত শক্তিশালী ভারতীয়-আমেরিকান প্রবাসীদের সমর্থন পেতে আগ্রহী। আর এ কারণেই কংগ্রেসের শীর্ষ এ নেতার এবারের যুক্তরাষ্ট্র সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে।
 
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারতের রাজনীতি নিয়ে যেকোনো বিদেশি রাষ্ট্র তাদের মন্তব্য করতে পারে। এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সুইজারল্যান্ডে ভারতীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে এক মতবিনিমিয় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। দেশের বিরোধী নেতার সঙ্গে বিদেশি কূটনীতিকের সাক্ষাৎ বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে কারো নাম উল্লেখ না করে জয়শঙ্কর বলেন, কোনো দেশের কূটনীতিক আমাদের রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে আমি মনে করি, তাদের রাজনীতি সম্পর্কেও আমাদের মন্তব্য শোনার জন্য তাদের প্রস্তুত থাকা উচিত।

অনেকে মনে করছেন ডোনাল্ড লু ও ইলহান ওমরের সঙ্গে সম্প্রতি রাহুল গান্ধীর সাক্ষাৎ প্রসঙ্গেই জয়শঙ্কর একথা বলেছেন। আগামী ৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দেশটিতে লাখ লাখ ভারতীয় সম্প্রদায় বসবাস করেন। অনেকে মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভারতীয় ভোটারদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। সেদিকে ইঙ্গত করেই হয়তো ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ মন্তব্য করেছেন।
 
গত আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন হয়। রাজনৈতিক এ পটপরিবর্তনের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি শক্তিগুলোর হাত রয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া, ২০২২ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ এশিয়ার আরেক দেশ পাকিস্তানে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ক্ষমতাচ্যুতির পর থেকেই ইমরান খান অভিযোগ করে আসছিলেন, তাকে সরানোর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। আর ইমরান খানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর জড়িত থাকার গুঞ্জন রয়েছে। যদিও অভিযোগের বিষয়টি জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড লু।