৬ বাংলাদেশিকে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে মাল্টা সরকারকে আদালতের নির্দেশ

মাল্টা
  © ফাইল ছবি

অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও ৬ বাংলাদেশি যুবককে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে আটকে রেখে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে ইউরোপের দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টা। সম্প্রতি এমনই একটি রায় দিয়েছে ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস (ইসিএইচআর)।

মাল্টার সংবাদমাধ্যম লভিন মাল্টার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘ইসিএইচআর জেবি এবং অন্যান্য বনাম মাল্টা’ শীর্ষক একটি মামলার অংশ হিসেবে এ রায় দিয়েছে। আবেদনকারীরা অভিযোগ করেন, ১৬-১৭ বছর বয়সি এই ছয়জন বাংলাদেশি ২০২২ সালে মাল্টায় পৌঁছান। সে সময় তাদের আরও ৪০ জন অভিবাসীর সঙ্গে সাগর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। 

এরপর প্রথমে তাদের হাল ফার প্রাথমিক অভ্যর্থনাকেন্দ্র রাখা হয় দুই মাসের জন্য। অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরও তাদের প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গেই থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। পরে ওই ছয়জনকে সাফি ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয় চার মাসের জন্য। সেখানেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। 

এ ঘটনা মামলা দায়ের করা হলে ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত মাল্টা সরকারকে মামলার এক আবেদনকারীকে ৯ হাজার ইউরো এবং বাকি পাঁচজনকে ১৫ হাজার ইউরো করে জরিমানা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি মামলা খরচ বহনের জন্য সবাইকে যৌথভাবে আরও ৬ হাজার ইউরো করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ৯০ হাজার ইউরো বা ১ কোটি ১৬ লাখ টাকার বেশি জরিমানা গুনতে হতে পারে মাল্টা সরকারকে। 

আদিতাস নামে একটি মানবাধিকার সংস্থা ওই ৬ জনকে নিয়ে মামলা দায়ের করেছিল। 

আদালত জানিয়েছে, মাল্টা সরকার ইউরোপীয় মানবাধিকার নীতিমালার অনুচ্ছেদ-৩ (অমানবিক বা অবমাননাকর আচরণের নিষেধাজ্ঞা), অনুচ্ছেদ-১৩ (ফলপ্রসূ প্রতিকার পাওয়ার অধিকার), অনুচ্ছেদ-৫ ও ১ (স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার অধিকার), অনুচ্ছেদ-৫ ও ৪ (আটকের বৈধতা দ্রুত আদালতের মাধ্যমে নির্ধারণের অধিকার) লঙ্ঘন করেছে। 

এই ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনকে ২০২৩ সালের মে মাসে মুক্তি দেওয়া হয় এবং কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে রাখা হয়। বাকি একজন সে বছরের আগস্টের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক বলে বিবেচিত হন এবং তাকে মাল্টা থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেখানে তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। 

আদালত উল্লেখ করেন যে, আবেদনকারী জেবি ছাড়া বাকি আবেদনকারীদের নাবালক হিসেবে ধরে নেওয়া হলেও তাদের প্রায় দুই মাস হাল ফার অভ্যর্থনাকেন্দ্রে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে রাখা হয়। আদালত সরকারের কাছে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়ার পর তাঁদের আটকের ব্যবস্থা পরিবর্তন করা হয়। 

আদালত উল্লেখ করেছে, আবেদনকারীরা তাদের অভিযোগের পক্ষে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করতে পারেননি। তবে তারা যেসব অভিযোগ করেছিলেন, তার মধ্যে কিছু যেমন—বাথরুমের দরজা ছিল না, শাওয়ার এবং বেসিন বন্ধ ছিল, তাদের কোনো সৃষ্টিশীল কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল না, টেলিভিশন ছিল না, ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি এবং তাদের ব্যায়াম করার কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। অভিবাসীরা ২৪ ঘণ্টাই তাদের ইউনিটগুলোতে বন্দী ছিলেন।

তথ্যসূত্র: যুগান্তর