এবার লেবাননের ঐতিহাসিক বন্দর নগরীতে ইসরায়েলি বিমান হামলা

লেবানন
  © সংগৃহীত

ইসরায়েলি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ দেখেও না দেখার ভান করছে পশ্চিমারা! ফিলিস্তিনের পাশাপাশি এবার লেবাননেও পূর্ণমাত্রায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার ইসরায়েল। লেবাননের ঐতিহাসিক বন্দর নগরী টায়ারে অন্তত চারটি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রীয় এলাকায় অভিযান সম্প্রসারণের বার্তা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এসব হামলা চালানো হয় বলে লেবাননের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার বরাতে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি।

ভিডিওতে দেখা গেছে, সমুদ্রের তীরের এলাকা থেকে কালো ধোঁয়ার বিশাল মেঘ উঠছে। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকাভুক্ত রোমান ধ্বংসাবশেষ থেকে মাত্র কয়েকশ মিটার দূরে এ দৃশ্য দেখা যায়। তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এর আগে লেবাননের বেসামরিক লোকদের এসব এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য সতর্ক করে জানায়, তারা সেখানে সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘জোরপূর্বক’ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের তীব্র বিমান হামলা ও স্থল অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কয়েক হাজার বাসিন্দা ইতিমধ্যেই শহর ছেড়ে পালিয়েছে।

তবে হামলা শুরু হওয়ার আগে লেবাননের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইউনিটের মুখপাত্র বিলাল কাশমার জানান, প্রায় ১৪ হাজার মানুষ এখনও শহরে বসবাস করছে, যার মধ্যে দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে বাস্তুচ্যুতরাও রয়েছে।

বিলাল কাশমার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আপনি বলতে পারেন যে পুরো টায়ার শহরটি খালি করা হচ্ছে। অনেক লোক শহরতলির দিকে যাচ্ছে।’

লেবাননের গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চল ও বেকা উপত্যকায় একাধিক হামলা চালিয়েছে। এসব এলাকায় হিজবুল্লাহর শক্তিশালী উপস্থিতি রয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আইডিএফ বলেছে, বৈরুতে হামলায় অস্ত্রভান্ডার ও অস্ত্র উৎপাদন স্থাপনা এবং সেইসঙ্গে হিজবুল্লাহর কমান্ড সেন্টারগুলো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল।

আইডিএফ আরও বলেছে, তারা জিবচিট, জুয়াইয়া ও কানার দক্ষিণাঞ্চলে গত কয়েকদিন ধরে বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ সেক্টর কমান্ডারদের হত্যা করেছে। তাদের সৈন্যরা দক্ষিণ লেবাননের অভ্যন্তরে অভিযানের সময় প্রায় ৭০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। 
এ বিষয়ে হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তাদের যোদ্ধারা বুধবার সকালে ইসরায়েলের গিলট গোয়েন্দা ঘাঁটি লক্ষ্য করে রকেটে হামলা চালিয়েছে। এটি ইসরায়েলি রাজধানী তেল আবিবের উত্তরে অবস্থিত ।

এদিকে, তেল আবিবে রকেট সতর্কতার সাইরেন বেজে উঠলে ইসরায়েল সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের হোটেলের একটি নিরাপদ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্লিঙ্কেন নিজেও আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কিনা তা জানা যায়নি।

হিজবুল্লাহর ছোড়া আরেকটি রকেট ব্যারেজ উত্তর ইসরায়েলের একর ও কিরিয়াত বিয়ালিক শহরের দুটো কারখানার ভবনে আঘাত হানে। 

গাজায় যুদ্ধের কারণে প্রায় এক বছরের আন্তঃসীমান্ত লড়াইয়ের পর হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে ইসরায়েল তার পূর্ণ-মাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করেছে। দেশটি বলছে, তারা রকেট হামলায় বাস্তুচ্যুত ইসরায়েলি সীমান্ত এলাকার কয়েক হাজার বাসিন্দার নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে চায়।

মিত্র ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের ইসরায়েলে ভয়াবহ আক্রমণের পরদিন গত বছরের ৮ অক্টোবর হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে উত্তর ইসরায়েলে রকেট ছুড়তে শুরু করে। যা এখনও চলছে। 

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত পাঁচ সপ্তাহে ১ হাজার ৯০০ জনসহ দেশটিতে গত বছরের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। অপরদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্তর ইসরায়েল ও অধিকৃত গোলান মালভূমিতে ৫৯ জন নিহত হয়েছে।