পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে গুলি, নারী-শিশুসহ নিহত ৪২
- আন্তর্জাতিক ডেস্ক
- প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ PM , আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৭ PM
পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িবহরে বন্দুক হামলায় তিন নারী-শিশুসহ অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। দেশটির পুলিশের বরাত দিয়ে পাকিস্তানি প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে।
এক প্রতিবেদনে জিও নিউজ জানায়, বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুর্রাম জেলার ওচত এলাকায় যাত্রীবাহী যানবাহনে হামলাকারীরা গুলি চালালে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
লন্ডনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে খাইবার পাখতুনখোয়ার প্রধান সচিব নাদিম আসলাম চৌধুরী বলেন, হামলাটি একটি বড় ট্র্যাজেডি। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ, অনেকে আশঙ্কাজনক।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের পারাচিনার থেকে পেশোয়ার যাওয়ার পথে গাড়িবহরে এই হামলা হয়। নিহত ছাড়াও একাধিক লোক আহত হয়েছেন। তাদের অ্যাম্বুলেন্সে করে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য আহতদের জেলা শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সৈয়দা বানু নামে এক যাত্রী বিবিসিকে জানান, হঠাৎ গুলি শুরু হলে তিনি বুদ্ধি করে তার সন্তানদের নিয়ে গাড়ির আসনের নিচে লুকিয়ে থাকেন। তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্ত তাদের প্রাণে বাঁচায়। গুলির শব্দ থেমে যাওয়ার পর তিনি বের হয়ে হতভম্ব হয়ে যান এবং দেখেন রাস্তায় ও গাড়ির ভেতর আহত ও নিহত মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন।
প্রাথমিক তদন্তের পর ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রদেশটির আইনমন্ত্রী আফতাব আলম জিওনিউজকে বলেন, সশস্ত্র ব্যক্তিরা পাহাড় থেকে গাড়ি বহর লক্ষ্য করে গুলি চালায়। আমি কুর্রাম পরিদর্শন করতে চেয়েছিলাম কিন্তু দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের মধ্যে বিরোধের কারণে জেলার দিকে যাওয়ার রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ওই দুটি গ্রুপ একে অপরকে ঘটনার জন্য দায়ী করছে। তারা উভয়ই সন্ত্রাসী দল। আমরা তদন্ত করছি। প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির মুখোমুখি করা হবে বলেও জানান তিনি।
এই হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আলী আমিন গান্দারপুর। তিনি মুখ্য সচিব, প্রদেশের আইনমন্ত্রী এবং স্থানীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দলকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এবং প্রদেশের সব মহাসড়কের নিরাপত্তা জোরদারে হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া হামলায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া ঘটনার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ আহতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছে জার্মানভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডয়েচে ভেলে।
যাদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে, তারা সাধারণ শান্তিপ্রিয় জনতা বলে জানিয়ে শেহবাজ শরীফ বলেন, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা মানবতার শত্রু। অশান্তি সৃষ্টিকারী এই আক্রমণকারীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে খাইবার পাখতুনখওয়া প্রদেশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দু’টি পৃথক হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর এক ডজনেরও বেশি সদস্য নিহত হন। এর মধ্যে তিরা উপত্যকার বাগ-মায়দান মারকাজের কাছে একটি সামরিক ক্যাম্পে গত রোববার রাতে বন্দুকধারীরা হামলা চালানোর পর দুই পক্ষের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হয়, যা দুই দিন ধরে চলে। দুই দিনের বন্দুকযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর মঙ্গলবার থমথমে পরিস্থিতির মধ্যে তিরার দোকানপাটগুলো খুলে। ওইদিনই প্রদেশটির বান্নু জেলার জানিখেল এলাকার মালি খেল চেকপয়েন্টের কাছে এক আত্মঘাতী হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য নিহত হন।