আদালতকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে যেন এটি সন্ত্রাসী সংগঠন: আইসিসি প্রেসিডেন্ট

আইসিসি
আইসিসির প্রেসিডেন্ট তোমোকো আকেনি  © ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের ওপর হামলা এর অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে; আমেরিকা ও রাশিয়া থেকে এই হুমকি আসছে বলে ধারণা।
 
সোমবার (০২ ডিসেম্বর) নেদারল্যান্ডসের হেগে আইসিসির বার্ষিক সভায় দেওয়া এক বক্তব্যে আইসিসির প্রেসিডেন্ট তোমোকো আকেনি আমেরিকা ও রাশিয়ার নাম উল্লেখ না করে বলেছেন, আদালত "জবরদস্তিমূলক ব্যবস্থা, হুমকি, চাপ এবং অন্তর্ঘাতমূলক কাজের" মুখোমুখি হচ্ছে।

গাজা ও ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে ইসরায়েল ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর থেকে আদালত দুই দেশের হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।

মি. আকেনি তার বক্তৃতায় বলেন, "আদালতকে নিরাপত্তা পরিষদের অন্য এক স্থায়ী সদস্য দেশের দ্বারা কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হচ্ছে যেন এটি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন।"

গাজায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালেন্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে  ট্রাইব্যুনাল। এর পর থেকে আমেরিকার রাজনীতিবিদরা আইসিসির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়ে আসছে। 

গত মাসে মার্কিন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম, যার রিপাবলিকান পার্টি কংগ্রেস এবং হোয়াইট হাউসের উভয় কক্ষের নিয়ন্ত্রণে থাকবে জানুয়ারিতে, আইসিসিকে একটি "বিপজ্জনক রসিকতা" বলে অভিহিত করেছেন এবং আদালত ও এটির সাথে সহযোগিতাকারী যেকোনো দেশের বিরুদ্ধে শাস্তির হুমকি দিয়েছেন।

ফক্স নিউজকে গ্রাহাম বলেন, "যে কোন মিত্র, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স- যদি আপনারা আইসিসিকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন, তবে আপনাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবো।"

গত জুনে, ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার জন্য আইসিসির প্রসিকিউটর করিম খানের অনুরোধের প্রতিক্রিয়ায় রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত মার্কিন হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস আদালতকে নিষেধাজ্ঞা দিতে একটি বিল পাস করে।

আইনটি এখনও সিনেটে অনুমোদিত হয়নি, যা এই সময়ে ডেমোক্র্যাটদের নিয়ন্ত্রণে।

গত মাসে নেতানিয়াহু, গ্যালেন্ট ও হামাস নেতার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর মার্কিন সিনেটর টম কটন হেগ-ভিত্তিক ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। 

আমেরিকা এবং ইসরায়েল আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্য নয়, এবং তারা গাজা ও পশ্চিম তীরে সংঘটিত অপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

যদিও আদালত আদেশ জারি করেছে যে ওই এলাকার রায় দেওয়ার অধিকার আদালতের আছে, কারণ যে রোম চুক্তির মাধ্যমে ট্রাইব্যুনাল গঠিত, ফিলিস্তিন সেই রোম চুক্তি সাক্ষরকারী একটি রাষ্ট্র।

আকেনি বলেন, আদালতের বৈধতা খর্ব করা, ন্যায়বিচার পরিচালনা করার ক্ষমতা, আন্তর্জাতিক আইন বাস্তবে পরিণত করা এবং এর মৌলিক অধিকারকে-  জবরদস্তি, হুমকি, চাপ এবং অন্তর্ঘাতমূলক কাজের মাধ্যমে হামলা করা হচ্ছে।

এই প্রচেষ্টাকে তিনি "ভয়ংকর" বলে অভিহিত করেছেন।

গত নভেম্বরে রাশিয়া আইসিসির বিচারক হায়কেল বিন মাহফুজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। 

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর গত বছর যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান ও আদালতের অন্য কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেছে মস্কো।

সোমবার আকেনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এই হুমকির মাধ্যমে আদালতের পতন "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আইনের শাসনের পতনকে বোঝাবে।"

আইসিসির প্রেসিডেন্ট বলেন, "ভুক্তভোগী আর কখনও ন্যায়বিচার পেতে সক্ষম হবে না। তাদের অনেকের জন্য আইসিসি ছাড়া বিশ্ব কল্পনাতীত।" 

"আমরা আদালতের স্বাধীনতার ওপর এবং আদালতের নিরপেক্ষতাকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছি," যোগ করেন তিনি। 

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০০২ সালে যুদ্ধাপরাধ, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা এবং আগ্রাসনের অপরাধের বিচার করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যখন সদস্য রাষ্ট্রগুলি নিজেরাই তা করতে অসম্মত বা অক্ষম ছিল।

সূত্র : আল জাজিরা