ফিলিস্তিনিদের সৌদিতে স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পরমর্শ নেতানিয়াহুর; জবাবে যা বললেন সালমান

ইসরায়েল
  © ফাইল ছবি

গাজা যুদ্ধের ভয়াবহতার পর এবার ফিলিস্তিনিদের পুরোপুরি উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছে দখলদার ইসরায়েল ও তার পশ্চিমা মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাবাসীকে অন্যত্র চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এদিকে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব। এছাড়া স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন হলে তবেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। এবার সালমানের জবাব দিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, যেহেতু সৌদির প্রচুর ভূমি রয়েছে, তাই দেশটি চাইলে নিজের ভূখণ্ড থেকে কিছু ভূমি দানের মাধ্যমে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে পারে।

শুক্রবার ইসরায়েলের সম্প্রচার সংবাদিমাধ্যম চ্যানেল ১৪-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, “স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য ভূমি প্রয়োজন। সৌদি আরব চাইলেই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করতে পারে, তাদের প্রচুর জমি আছে।”

দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চাইছে ইসরায়েল। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশ মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান এবং বাহরাইনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও স্থাপন করতে সক্ষম হয় দেশটি। তবে ইসরায়েলের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ছিল মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃস্থানীয় দেশ সৌদি আরবের স্বীকৃতি এবং রিয়াদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক।

সে লক্ষে কাজ শুরু হয়েছিল এবং তা অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছিল; কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে হামাসের হামলা সব ভণ্ডুল করে দেয়।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা, সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ২৫১ জনকে গাজায় ধরে নিয়ে যায় তারা।

আকস্মিক সেই হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। টানা ১৫ মাস ধরে চলা ভয়াবহ সেই অভিযানে গাজায় নিহত হয়েছেন ৪৭ হাজারেরও বেশি মানুষ এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ১১ হাজারেরও বেশি।

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান শুরুর পর থেকেই কার্যত হিমঘরে চলে যায় সৌদি-ইসরায়েল দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্কের সম্ভাবনা। তবে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতির পর থেকে ফের এ ইস্যুতে আলোচনা শুরু হয়েছে। সৌদির ক্রাউন প্রিন্স এবং প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান অবশ্য সম্প্রতি স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমের সমন্বয়ে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত না হলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না রিয়াদ।

শুক্রবারের সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করা হয়— সৌদির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের স্বার্থে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে ইসরায়েল সহযোগিতা করবে কি না। উত্তরে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে নেতানিয়াহু বলেন, “একদমই নয়। ৭ অক্টোবরের হামলা অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। এখন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে তা হবে ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।”

“আপনি ভাবতে পারেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হলে কী হবে? বিশেষ করে ৭ অক্টোবরের পর? গাজা ছিল একটি ফিলিস্তিনি রাজ্য। হামাস সেই রাজ্য চালাত এবং আপনারা সবাই জানেন যে সেখান থেকে আমরা কী পেয়েছি।”

সূত্র : এএফপি, আনাদোলু এজেন্সি