পাকিস্তানে হামলার জন্য কতজন বিশ্বনেতার সঙ্গে কথা বলেছে মোদি? তথ্য ফাঁস

ভারত
  © ফাইল ছবি

কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। হামলার পরবর্তী সময়ে সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চার দফা গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ব্যাপক তল্লাশি চালিয়ে শত শত মানুষকে আটক করেছে। এ পরিস্থিতিতে যুদ্ধের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। ভারত, বিশেষ করে দিল্লি, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং এ লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ জোরদার করেছে।

রবিবার (২৭ এপ্রিল) নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, কাশ্মীরে হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত। সেজন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ এপ্রিলের পর থেকে অন্তত এক ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া ব্রিফিংয়ের সঙ্গে জড়িত এমন চারজন কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদেন আরও বলা হয়, মোদির এসব প্রচেষ্টা মূলত শান্তি আনার জন্য নয়, বরং সামরিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুতের অংশ। সম্প্রতি দেওয়া এক ভাষণে মোদি ‘সন্ত্রাসের আস্তানা ধ্বংসের’ হুমকি দেন, যদিও তিনি সরাসরি পাকিস্তানের নাম নেননি।

এদিকে, পাকিস্তানও তার মিত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে চীন, সৌদি আরব, ইরান ও মিসরকেও পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছে পাকিস্তান।

গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হামলার পর পাকিস্তানকে দায়ী করে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দিয়ে পাকিস্তানিদের ফিরে যেতে বলা হয়েছে। সব ধরনের বাতিল হয়েছে ভিসা। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতও করেছে ভারত।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসাবে একই ধরনের পদক্ষেপ দিয়েছে পাকিস্তানও। সিন্ধু নদের পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিতে ভারতের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান সিমলা চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া পাকিস্তানের আকাশসীমা নিষিদ্ধ, সব ধরনের বাণিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ জানান, সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিতের পদক্ষেপকে ‘যুদ্ধের ঘোষণা’ হিসেবে দেখছে পাকিস্তান। তিনি বলেছেন, যেকোনো মূল্যে নিজের পানির অধিকার রক্ষা করবে পাকিস্তান। 

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়, আমাদের থামাতে কেউ পারবে না। মোদি যদি উত্তেজনা বাড়ানোর পথ বেছে নেন, তবে আমরা তাকে তার বাড়ি পর্যন্ত ধাওয়া করব।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের ‘রক্ত ফুটছে’। হামলায় জড়িত প্রত্যেককে কঠিনতম শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকরা বলছেন, পাকিস্তান যে কাশ্মীরা হামলা চালিয়েছে, তার জোরালো প্রমাণ এখনও দেখাতে পারেনি ভারত। এ অবস্থায় দিল্লি কোনো পদক্ষেপ নিলে বিশ্ব মঞ্চে তার ন্যায্যতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চমলান সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা যদি বাড়তে থাকে তাহলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। 

এদিকে, ইরান এবং সৌদি আরব উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন। ইরান ও বাংলাদেশ প্রকাশ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংযম এবং সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন।