অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতা

বিদেশে পাড়ি জমাতে গণহারে পাসপোর্ট নিচ্ছেন শ্রীলংকানরা

বিদেশে পাড়ি জমাতে গণহারে পাসপোর্ট নিচ্ছেন শ্রীলংকানরা
পাসপোর্ট অফিসে অপেক্ষা  © সংগৃৃহীত

তীব্র অর্থনৈতিক সংকট ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশে থাকার আগ্রহ হারাচ্ছেন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলংকার নাগরিকরা। দেশটির হাজার হাজার মানুষ পাসপোর্ট অফিসে ভিড় বাড়াচ্ছেন। ২০২১ সালের প্রথম পাঁচ মাসে যে হারে মানুষ পাসপোর্ট তৈরি করেছেন সে হার বেড়ে তিনগুণ হয়েছে ২০২২-এ। এসব মানুষ পাসপোর্ট করে দেশ ছাড়তে চান। অবশ্য দেশটির সরকারও রেমিটেন্স প্রভাহ বাড়ানোর জন্য বিদেশে যেতে ইচ্ছুক নাগরিককে সমর্থন ও যাবতীয় সহযোগীতা করছেন। খবর রয়টার্সের। 

রয়টার্স বলছে, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং করোনাভাইরাস মহামারির কারণে শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কার্যত নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আর এর ফলে দ্বীপরাষ্ট্রটির ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ খাদ্য, রান্নার গ্যাস, জ্বালানি এবং ওষুধের প্রকট সংকটের মধ্যে পড়েছে।
এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে ডলারের বিপরীতে নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ৩৩ শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি। সঙ্গে আছে দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার উদ্বেগও। আর এই বিষয়গুলোই শ্রীলঙ্কার বহু মানুষকে দেশান্তরিত হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

দেশটির সরকারি তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪৫টি পাসপোর্ট ইস্যু করেছে শ্রীলঙ্কান সরকার। অন্যদিকে গত বছরের একইসময়ে পাসপোর্ট ইস্যুর এই সংখ্যাটি ছিল ৯১ হাজার ৩৩১টি। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সংকট থেকে বাঁচতে গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ পাসপোর্ট হাতে নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

এমনকি পাসপোর্ট প্রাপ্তির জন্য শ্রীলঙ্কান নাগরিকদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে লাইনে। এতে করে ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। পাসপোর্টের লাইনে শ্রমিক, দোকানের মালিক, কৃষক, সরকারি কর্মচারী এবং গৃহিণীরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন যারা কেবল পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় সারা রাত ধরে লাইনে অবস্থান করেছেন। মূলত তাদের সবাই গত সাত দশকের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সংকট থেকে বাঁচতে চান। একটু উন্নত জীবনের আশায় বিদেশে পাড়ি জমাতে চান।

আর.এম.আর লেনোরা নামে এক নারী বলেন, রেস্তোরাঁয় রান্নার গ্যাস নেই। অন্যদিকে খাবারের খরচ আকাশ ছুঁয়েছে। আর এই কারণেই আমার স্বামী চাকরি হারিয়েছেন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কাজ খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন এবং বেতন খুব কম। দিনে প্রায় ২৫০০ শ্রীলঙ্কান রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬৩৪ টাকা) উপার্জন করেন তিনি। এই টাকায় দুই সন্তান নিয়ে জীপনযাপন করা অসম্ভব। আমি কুয়েতে দুই বছর কাটাতে চাই। তারপর আমি নিশ্চিত যে, আমি আয় করতে পারব এবং ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট সঞ্চয়ও করতে পারব।


মন্তব্য