নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস : ৭ লাখ টাকায় বিক্রি, ভাগ পান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও!
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৫:০৫ PM , আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২২, ০৫:১১ PM

বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে সংস্থাটির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। গ্রেপ্তারকৃতরা নিম্নস্তরের কর্মকর্তা। তাই প্রশ্ন ফাঁস করতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের গাফিলতি বা সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন তদন্তকারীরা। পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর এমনই দাবি করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
শনিবার (২২ অক্টোবর) এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। গ্রেপ্তাররা হলেন আওলাদ হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম (৩৬), এনামুল হক (২৮), হারুন-অর-রশিদ ও মাহফুজুল আলম (৩১)। গত শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গতকাল বড় ধরনের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল বিমানের। কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন আমরা জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে যাই। এর পরই আমরা কাজ শুরু করে দিই। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত এবং প্রশ্ন বিতরণের সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করি। ’
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, তাদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিভিন্ন পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছেন। নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করে দেন, কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করবেন এবং কিভাবে তা বিতরণ করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী পরীক্ষার আগের দিন চার-পাঁচজন মিলে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নটি ফাঁস করেন। পরে গ্রেপ্তারকৃতরা ফাঁস প্রশ্ন সরাসরি এবং হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বিতরণ করেন, টাকা নেন। এই প্রশ্ন তারা সর্বোচ্চ সাত লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। এ ছাড়া গরিব পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে তারা নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সই নিয়েছেন যে তাদের বাড়ি কিংবা জমিজমা লিখে দেবেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার আসামিরা এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমাদের কাছে স্বীকার করেন। এই নিয়োগ পরীক্ষার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। এই কমিটির চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে সেই রহস্য উদঘাটন করার জন্য আমরা আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করব। গ্রেপ্তারদের সঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব। এই টাকার ভাগ তারা আবার ওই সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও দিয়েছেন। এসব বিষয়ে আমরা বিস্তারিত তথ্য জানার চেষ্টা করব গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে। ’
তিনি আরো বলেন, ‘বিমানের ডিজিএম ও জিএমের সমন্বয়ে যে কমিটিটা গঠিত হিয়েছিল তাদের কাজ ছিল প্রশ্ন ফাঁসের মতো বিষয় রোধ করা। কিন্তু তাদের চোখের আড়ালে কিভাবে প্রশ্ন ফাঁস করা হলো তা আমরা জানতে চাইব। এ বিষয়ে তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব কিভাবে তাদের চোখ আড়াল করে অফিস সহকারীরা প্রশ্নটি ফাঁস করেছেন। ’
যারা ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কি না এবং বিমানের কমিটি প্রশ্ন ফাঁসের দায় নেবে কি না―জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব। এ ছাড়া গ্রেপ্তারদের কাছেও রিমান্ডে আমরা এ বিষয়ে তথ্য জানার চেষ্টা করব। ’