দেশজুড়ে চলছে অভিযান, পাওয়া যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ PM , আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ PM

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার পর রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বাত্মক অভিযান চলছে। অভিযানের তৃতীয় দিনে গতকাল আরও ৩ সহস্রাধিক ব্যক্তি গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। নাশকতার পেছনে অর্থায়ন এবং সহিংসতার নির্দেশদাতাদের ব্যাপারে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, রাজধানী ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা ১৫৪টি মামলায় ১ হাজার ৭৫৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেফতার হওয়া অনেকেই এখন রিমান্ডে। নাশকতার পেছনে অর্থায়ন এবং সহিংসতার নির্দেশদাতাদের ব্যাপারে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিচ্ছে।
তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা ঢাকায় পুলিশের ৬৯টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছেন। আগুন দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি ট্রাফিক বক্সে। সহিংসতায় পুলিশের যে ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আমাদের উন্নয়ন বিভাগ কাজ করছে। এ পর্যন্ত ৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। ডিএমপি এক বিবৃতিতে জানায়, সহিংসতায় তাদের মোট ৬১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
তিনজন পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার তথ্য জানিয়ে যুগ্ম-কমিশনার বিপ্লব বলেন, পুলিশ সদস্যদের হত্যায় জড়িতদের একজনকেও রেহাই দেওয়া হবে না। গত কয়েকদিন ধরে ঢাকায় যে সহিংসতা ও নাশকতা হয়েছে এবং যেভাবে পুলিশ ও অন্যান্য সরকারি স্থাপনা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ হতে পারে না, এটা বিএনপি-জামায়াতের লোকজনই করেছে।
আমীর খসরুসহ আরও ৪০৫ জন কারাগারে :
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি-জামায়াতের আরও ৪০৫ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন ঢাকার নিম্ন আদালত। গতকাল ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের পৃথক কয়েকটি আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। সেতু ভবনে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসসহ সাতজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিরব, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি মো. রফিকুল আলম মজনু, ১২-দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদা, মো. মহিউদ্দিন হৃদয়, রশীদুজ্জামান মিল্লাত ও মো. তরিকুল ইসলাম তেনজির। এ ছাড়া ঢাকার নয় থানার পৃথক কয়েকটি মামলায় আরও ৩৪ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
ধানমন্ডি থানার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহেরসহ সাতজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এ মামলায় রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- শ্যামপুর থানা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. কামরুল হাসান রিপন, মো. মোবারক হোসেন, ড্যাবের সাবেক সভাপতি ডা. মো. সালাহ উদ্দিন সাঈদ, মোহাম্মদ আলী, মেহেদী হাসান ও বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী। এ ছাড়া শাহবাগ থানার দুই মামলায় নয় আসামির বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর মধ্যে সাতজনের চার দিন এবং দুজনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ক্যান্টনমেন্ট থানার এক মামলায় চারজনের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শেরেবাংলা নগর থানার মামলায় চারজনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। চকবাজার থানার মামলায় একজনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। মোহাম্মদপুর থানার মামলায় একজনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে ঢাকা জেলার তিন থানার মামলায় আরও নয়জনকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দোহার থানার তিনজন, নবাবগঞ্জ থানার দুজন ও কেরানীগঞ্জ মডেল থানার চারজন রয়েছেন।
এদিকে কারাগারে যাওয়া আসামিদের মধ্যে বাড্ডা থানার ২৬ জন, ভাটারা থানার চারজন, কোতোয়ালি থানার আটজন, বংশাল থানার ৫ জন, লালবাগ থানার ১১ জন, চকবাজার ৪ জন, বনানী ১১ জন, গুলশানে একজন, কদমতলী ১৬ জন, তুরাগ ৭ জন, উত্তরা পূর্ব ৩৩ জন ও পশ্চিমে ৭ জন রয়েছেন। এ ছাড়াও ধানমন্ডি তিনজন, বিমানবন্দরে পাঁচজন, মুগদায় একজন, যাত্রাবাড়ী ৯৯ জন, ডেমরা থানার সাতজন, পল্টন মডেল থানার তিনজন, শাহজাহানপুর থানার পাঁচজন, মতিঝিল থানার চারজন, রামপুরা থানার ছয়জন, মিরপুর মডেল থানার ১৪ জন, শেরেবাংলা নগর থানার একজন, কাফরুল থানার একজন, পল্লবী থানার ৯ জন, রূপনগর থানার ৯ জন, শাহবাগ থানার একজন, রমনা থানার একজন, ক্যান্টনমেন্ট চারজন, ওয়ারী থানার ২১ জন, সূত্রাপুর ছয়জন, সবুজবাগ থানার তিনজন, রামপুরা থানার ছয়জন, নিউমার্কেট থানার একজন, কলাবাগান থানার দুজন, তেজগাঁও থানার দুজন, হাতিরঝিল থানার ২০ জন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ১৪ জন, মোহাম্মদপুর থানার আটজন, আদাবর থানার তিন, খিলগাঁও থানার একজন, আশুলিয়া থানার ছয়জন ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার তিনজন আসামি রয়েছেন।
এ ছাড়াও মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াতের ৫৬৪ জনকে কারাগারে ও ১৭ জনকে রিমান্ডে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রী আমানউল্লাহ আমানসহ ১৭৩ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। তার আগে রবিবার ১৭৩ জন, শনিবার ৪৯ জন এবং শুক্রবার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণসহ ৭ নেতা-কর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত এক সপ্তাহে দায়েরকৃত ২৭ মামলায় ৭০৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তা ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড কার্যালয় ভাঙচুর, হত্যাচেষ্টা, মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের ঘটনায় নতুন করে নগরের চান্দগাঁও থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়। ১৬ জুলাই রাত থেকে ২৪ জুলাই সকাল ৮টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা ও জেলায় মোট ২৭টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ১৬ মামলায় ৩৭৩ ও জেলায় ১১ মামলায় ৩৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াত সমর্থক। রাজশাহী : রাজশাহী জেলা ও মহানগর পুলিশের অভিযানে ১৫১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে জেলার ১০ মামলায় ১০৫ ও মহানগরে ৪৬ জন। গত পাঁচ দিনে মহানগরে নাশকতা মামলায় ১০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বরিশাল : বরিশাল মহানগরসহ জেলা থেকে গত তিন দিনে বিএনপি-জামায়াতের ৯৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বরিশাল মহানগর পুলিশের স্টাফ অফিসার সহকারী কমিশনার প্রণয় রায় জানিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনায় মহানগর পুলিশের চার থানায় পুলিশ বাদী হয়ে চারটি মামলা করেছে। এ ছাড়া এক ব্যক্তি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মোট পাঁচ মামলায় নামধারী ৩৫ এবং অজ্ঞাতনামা ২ হাজার ৭৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং সহযোগী সংগঠনের ৮০০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।