আগুন লাগার পর যে কাজগুলো করবেন আর যেগুলো করবেন না

আগুন
  © ফাইল ছবি

কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ছিলো রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে লাগা আগুন। এই আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। আমাদের প্রতিদিনের নিত্যপ্রয়োজনীয় উপাদান হলো আগুন। কিন্তু একটু অসাবধানতায় শেষ হয়ে যেতে পারে সবকিছু। অনেক সময় আগুন লেগে যাওয়ার পর কিছু ভুলের কারণে বাড়তে পারে হতাহত বা মৃতের সংখ্যা। কঠিন পরিস্থিতিতে বুদ্ধি খাটানো আরও কঠিন হয়ে যায়। আগুন লেগে গেলে যতটা সম্ভব মাথা ঠান্ডা রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। এতে হয়তো সম্ভব হবে বেঁচে ফেরা। 

আগুন যাতে না লাগে সেজন্য সব সময় সতর্ক থাকতে হবে। এরপরও যদি কখনো আগুন লেগেই যায় তবে করতে হবে কিছু কাজ। জেনে নিন হঠাৎ আগুন লাগলে কোন কাজগুলো করবেন, কোনগুলো করবেন না-

১. কারও কথা শুনে বিচলিত না হয়ে প্রথমে বোঝার চেষ্টা করুন সত্যিই আগুন লেগেছে কি না। আগুনের পরিমাণ কম থাকলে দ্রুত অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র ব্যবহার করে তা নিভিয়ে ফেলুন। সতর্কতার অংশ হিসেবে অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখে রাখুন। 

২. বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে না লেগে থাকলে তা নেভানোর জন্য পানি ব্যবহার করতে পারেন। তবে বৈদ্যুতিক বা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে আগুন লাগলে তাতে পানি দেওয়া যাবে না। যে আগুন আপনার পক্ষে নেভানো সম্ভব নয়, তা নেভাতে যাবেন না।

৩. আগুন যদি অনেকটাই ছড়িয়ে যায় তাহলে নেভানো সহজ নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে দ্রুত ভবন ত্যাগ করুন। কারণ আগুন ছড়িয়ে পড়লে বের হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে।

৪. আগুন লেগে গেলে দামি কিছু বাঁচাতে গিয়ে সময়ক্ষেপণ করবেন না। সবচেয়ে দামি হলো নিজের জীবন। তাই সবার আগে সেটি রক্ষা করতে হবে। বাকি সবকিছুই হয়তো ফিরে পাওয়া সম্ভব কিন্তু জীবন একবার গেলে আর ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই নিজে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা দ্রুত নিরাপদে বের হয়ে আসুন। 

৫. আগুন লাগলে যত দ্রুত সম্ভব ফায়ার সার্ভিসে খবর দিতে হবে। আপনার আপনার আশেপাশের ফায়ার স্টেশনের ফোন নম্বর সংগ্রহ করে রাখুন। প্রয়োজনে জরুরি পরিষেবা ৯৯৯-এ কল করুন।

৬. আপনার কাপড়ে আগুন ধরে গেলে ভুলেও দৌঁড়াবেন না। কারণ এতে বাতাসের কারণে আগুন আরও বেশি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই পোশাকে আগুন লাগলে যত দ্রুত সম্ভব মাটিতে শুয়ে পড়ুন। এরপ দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে সামনে পেছনে গড়াগড়ি করতে থাকুন যতক্ষণ না আগুন নিভে যায় ।

৭. ধোঁয়ার ভেতরে মুখ না ঢেকে বের হতে যাবেন না। হেঁটেও বের হবেন না। যদি পুরো বাড়ি ঘন কালো ধোঁয়ায় ভরে যায় তবে নিচু হয়ে বা হামাগুড়ি দিয়ে অথবা গড়াতে গড়াতে বের হতে হবে। মুখ সম্পূর্ণ ঢেকে ধোঁয়ার নিচ দিয়ে বের হয়ে আসতে হবে। নইলে ধোঁয়ার বিষাক্ত গ্যাস চোখে-মুখে ঢুকে গিয়ে বিপদ বাড়তে পারে।

৮. আপনি যদি ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে পড়েন তাহলে ডাস্ট টেপ, ভেজা তোয়ালে বা কাপড় দিয়ে দরজা ও তার আশেপাশের সব ফাঁকা জায়গা ও বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ করে দিন ।

৯. জানালার বাইরে উজ্জ্বল রঙের কাপড় ঝুলিয়ে দিন এবং নাড়াচাড়া করতে থাকুন যাতে অগ্নি নির্বাপন কর্মীরা বুঝতে পারেন আপনি ভেতরে আছেন।

১০. আগুন যদি আপনার রান্না ঘরের তেল বা গ্রিজ থেকে সৃষ্টি হয়, তাহলে তার উপর বেকিং সোডা বা লবণ ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করুন। এটা যদি রান্না করার পাত্রে সূত্রপাত হয় তাহলে তা ঢাকনা দিয়ে দ্রুত ঢেকে দিন। জ্বলতে থাকা কড়াইয়ে পানি ঢালবেন না বা ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করবেন না।

১১. আগুন না নেভা পর্যন্ত বাড়ির ভেতর আবার ঢোকার চেষ্টা করবেন না। সামান্য আহত হলেও চিকিৎসা নিতে অবহেলা করবেন না। তাই আহত হয়ে থাকলে দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিতে হবে তখনই।

১২. হঠাৎ আগুন লাগলে কী করবেন তার পূর্বপ্রস্তুতি থাকতে হবে। দরজা, জানালা, সিঁড়ির অবস্থান ও দ্রুত বেরিয়ে যাওয়ার বিকল্প কোনো রাস্তা আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখতে হবে। বাড়ির সবাইকে, অফিসের সহকর্মীদের এ বিষয়ে জানিয়ে রাখুন।

১৩. বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ড বা মাল্টিপ্লাগের আশপাশে কাগজপত্র বা এ ধরনের জিনিস রাখবেন না। টিভি, ফ্রিজ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, মুঠোফোন চার্জার ইত্যাদি  বৈদ্যুতিক প্লাগে লাগিয়ে রেখে দেবেন না। কাজ শেষ হলে সুইচ বন্ধ করে প্লাগ থেকে খুলে রাখুন। বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে আগুন লাগলে প্রথমেই মূল সুইচ বন্ধ করে দিন।

সূত্র : ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯


মন্তব্য


সর্বশেষ সংবাদ