ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে মাতোয়ারা পুরান ঢাকা
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩২ AM , আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১১:৩২ AM

ঢাকার আকাশ গতকাল সকাল থেকেই ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। পৌষের বিদায়ক্ষণে এমন আবহাওয়ায় পুরান ঢাকায় চলে ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব। দিনটি ঘুড়ি উৎসব হিসেবেও পরিচিত।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার বাসাবাড়ির ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি ওড়ানো। ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতা মাঞ্জা দেওয়া থেকে শুরু করে পিঠা বানানোর ধুম পড়ে। আর বাড়ির ছাদে ছাদে সাউন্ডবক্সে বাজতে থাকে গান। সেই তালে নেচে-গেয়ে সাকরাইন উৎসবে মেতে ওঠে পুরান ঢাকাবাসী।
পঞ্জিকামতে বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিন উদযাপন করা হয় পৌষসংক্রান্তি। বর্তমানে পৌষসংক্রান্তি শুধু সংক্রান্তি নামে পরিচিতি লাভ করেছে আর পুরান ঢাকার মানুষ একে বলে সাকরাইন। এ উপলক্ষে পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে সাকরাইন উৎসব উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানো ছাড়াও ছিল নানা আয়োজন। ছাদে জমকালো আলোকসজ্জা, আতশবাজি ফোটানো এবং ডিজে গানের সঙ্গে মুখে আগুন নিয়ে ফায়ার শো করতে দেখা গেছে তরুণ-তরুণীদের।
এবারও সাকরাইন উদযাপনের রাতে সব ধরনের বিস্ফোরক দ্রব্য, আতশবাজি, পটকা ফোটানো বা ফানুস ওড়ানো ডিএমপি থেকে নিষিদ্ধ করা হলেও, চারদিকে আতশবাজি ফোটানোর ধুম দেখা গেছে।
সকালের তুলনায় বিকেলে এ উন্মাদনা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ছাদের ওপর চলে গান-বাজনা, আর খাওয়া-দাওয়া। সেইসঙ্গে আনন্দের উত্তাপকে আরও এক ধাপ বাড়িয়ে দেয় ঘুড়ির কাটাকাটি খেলা। এ ছাড়া ঘরে ঘরে তৈরি হয়েছে মুড়ির মোয়া, বাখরখানি আর পিঠা বানানোর ধুম।
ঘুড়ি ওড়ানো ও আতশবাজির মধ্য দিয়ে সাকরাইন উৎসব পালন করে ঢাকাবাসী নামে একটি সংগঠন। বকশীবাজারে অবস্থিত ঢাকা টাওয়ারের ছাদে এ উৎসব পালন করা হয়। সে সময় পুরান ঢাকার নৃত্য, কাওয়ালি ও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে এ উৎসব পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন বলেন, বাংলাদেশ এখন সব কিছুতে সমৃদ্ধিশালী। কোনো কিছুরই অভাব নেই এ দেশে। আজকের এ আয়োজন সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এই আয়োজনে অংশ নিতে পেরে আমরা গর্বিত।
আরও পড়ুন: মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় শেষ হলো ইজতেমার প্রথম পর্ব
এ অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমাদের ছোটবেলায় গ্রামগঞ্জে ঘুড়ি উৎসব করতাম। এখন সেটি পুরোপুরি নাই হয়ে গেছে। তবে পুরান ঢাকা এখন পর্যন্ত যে এই উৎসব পালন করে, এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি ঢাকাবাসী তাদের এই ঐতিহ্য ধরে রাখবে। প্রতিবছরই এই উৎসব পালিত হোক—এটাই কামনা করি।
এদিকে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, প্যারিদাস রোড, কাগজিটোলা, নারিন্দা, ধোলাইখাল এলাকায় বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি চলে নাচ-গান।
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পুরান ঢাকার মালিটোলায় সাকরাইন (ঘুড়ি উৎসব) ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাকরাইন উৎসব পুরান ঢাকার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন উৎসব। এ ধরনের উৎসব ঢাকাবাসীকে আরও বেশি ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখবে।