রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, আলোচনায় শীর্ষে মসিউর রহমান
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪০ AM , আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ০৮:৪৭ AM

আগামী মাস তথা ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় রাষ্ট্রপতি হবেন আওয়ামী লীগের এটা নিশ্চিত বলাই যায়। ফলে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, সেটাই এখন আলোচনার মূল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় দলের ভেতরের খবর হচ্ছে—কয়েক মাস ধরে ডজনের বেশি ব্যক্তির নাম আলোচনায় ছিল। এখন তালিকা সংক্ষিপ্ত হয়ে চার–পাঁচজনে নেমে এসেছে। এর মধ্যে শীর্ষে আছে মসিউর রহমান, শিরীন শারমিন চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আনিসুল হক ও বিচারপতি খায়রুল হকের নাম।
সংসদীয় গণতন্ত্রের যুগে ১৯৯১ সালের পর আর কখনো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোটের প্রয়োজন হয়নি। বরাবরই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হয়ে আসছেন। এখন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল অন্যান্য দল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেওয়ার কোনো আলোচনা নেই। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মানেই নিশ্চিত রাষ্ট্রপতি।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, যেসব নাম নিয়ে দলে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে, সেগুলো খসড়া বলা চলে। চূড়ান্ত একজনকে বাছাই করবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এখনো নিজের পছন্দের কথা প্রকাশ করেননি।
তবে দলের নেতাদের কেউ বলছেন, সক্রিয় ও পরীক্ষিত রাজনীতিক এবার রাষ্ট্রপতি হবেন। কারও মতে, উপদেষ্টা পরিষদ থেকে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। কেউ কেউ মনে করেন, এবার একজন নারীকে রাষ্ট্রপতি করা হতে পারে।
জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি। আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টির ৪টি, জাসদের ২টি, গণফোরামের ২টি, বিকল্পধারার ২টি, তরিকত ফেডারেশনের ১টি ও জেপির ১টি আসন রয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন তিনজন। বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য পদত্যাগ করায় এখন সংসদে দলটির কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা রাষ্ট্রপতি পদে কোনো প্রার্থী দেবেন না। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর দিকেই সবার নজর।
রাষ্ট্রপতির কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। তাই অনেকেই পদটিকে ‘আলংকারিক’ হিসেবে আখ্যা দেন। তবে রাজনৈতিক সংকট কিংবা নির্বাচনের সময়ে রাষ্ট্রপতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন। সে কারণে আগামী সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ গ্রহণ করেন। আগামী ২৩ এপ্রিল তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদকাল শেষ হচ্ছে।
সংবিধান অনুসারে, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন। মেয়াদ অবসানের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে হবে। সে হিসাবে আগামী ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে কে আসতে পারেন, এ বিষয়ে কাজ করছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতি করা হবে। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির শুরুতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রাষ্ট্রপতি পদে চার-পাঁচটি নাম বেশি আলোচনায়। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, চট্টগ্রাম–১ আসনের সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মধ্যে যে কেউ বসতে পারেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে।
মাস দুয়েক আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের নামও আলোচনায় ছিল। এখন সেই আলোচনা অনেকটা কমে গেছে।
ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও কিছুদিন আলোচনা ছিল। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার পর সেই আলোচনা আর নেই। সম্প্রতি ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তিনি ছোটাছুটি করা মানুষ, তিনি মাঠে কাজ করতে চান। রাষ্ট্রপতি হবার যোগ্যতা তাঁর নেই।
সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকও রাষ্ট্রপতি পদে বিবেচনায় থাকতে পারেন, এই ধারণা আছে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকের। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর নামও আলোচনায় আছে।
সরকার ও দলের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ার সঙ্গে নানা সময় যুক্ত ছিলেন, এমন দুজন আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্ভাবনার ক্রম করা হলে এখনো মসিউর রহমানের নাম শীর্ষে আছেন। এমনকি রাষ্ট্রপতি পদে তাঁকে বিবেচনার পর গণমাধ্যমে বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাঁর সম্পৃক্ততা কমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি চোখে পড়ে না।
ওই নেতারা বলেন, এরপরই চট্টগ্রামের মোশাররফ হোসেনকে বিবেচনায় নেওয়া যায়। গত ২৪ ডিসেম্বর ঘোষিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিমণ্ডলীতে শেখ হাসিনার পরই তাঁর নাম রয়েছে। আগের কমিটিতে তাঁর অবস্থান ছিল ষষ্ঠ। সাজেদা চৌধুরী ছিলেন শেখ হাসিনার পরে। সাজেদা চৌধুরী মারা যাওয়ার পর এবার তাঁকে চার ধাপ এগিয়ে আনা হয়েছে। এ থেকেও কেউ তাঁকে সম্ভাব্য রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিবেচনা করছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের কাছে একজন নারী রাষ্ট্রপতি করার কথা বিভিন্ন সময় বলেছেন। সে হিসেবে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী আলোচনায় আছেন। এমনটা হলে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা, সংসদের উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা—সবাই হবেন নারী। এই ভাবনাকে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বলছেন ‘চমকপ্রদ’।
তবে আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যে নামগুলো আলোচনায় আছে, তা দলীয় সভাপতিরও বিবেচনায় আছে। তবে তিনি এখনো তাঁর মনোভাব প্রকাশ করেননি। এ মাসের শেষের দিকে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম জানা যাবে।
সূত্র: প্রথম আলো