দেশে নতুন করে চালু হবে পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর: বেবিচক
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৪ AM , আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:২৪ AM

দেশের বিভিন্ন জেলায় পরিত্যক্ত, অব্যবহৃত ও দখলে থাকা ৭টি বিমানবন্দর নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
এগুলো হচ্ছে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, বগুড়া, শমসেরনগর, কুমিল্লা ও তেজগাঁও বিমানবন্দর। দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতের বিকাশ ও যাত্রী পরিবহণ বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাজ শুরু হয়েছে। বেবিচকের ২০৩০ সালের কর্মপরিকল্পনা এবং সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। আরও জানা গেছে, বর্তমানে এই বিমানবন্দরগুলোর কোনোটিতেই বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করছে না।
কয়েকটি রয়েছে বিভিন্ন সংস্থার দখলে। অনেকগুলো বিমানবন্দরের রানওয়েতে গরু-ছাগলসহ গবাদি পশু অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোনো কোনো বিমানবন্দরের চারদিকে বাউন্ডারি দেওয়ালসহ কোনো ধরনের নিরাপত্তা চৌকি নেই।
রানওয়েতে ক্রিকেট খেলেন স্থানীয়রা। আবার কোনো কোনো রানওয়েতে জন্মেছে বড় গাছ। ঘাস বড় হওয়ায় অনেক রানওয়েও দেখাও যায় না। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত থাকায় রানওয়ের শক্তি পিসিএন (পেভমেন্ট ক্ল্যাসিফিকেশন নাম্বার) নষ্ট হয়ে গেছে। আর সংস্কার না করায় ও পানি জমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও রানওয়ের পিস ঢালায় ও ব্লক ভেঙে গেছে।
বেবিচকের পিএন্ডডিকিউ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় বর্তমানে ২৮টি বিমানবন্দর রয়েছে। এগুলো ব্রিটিশ সরকারের আমলে তৈরি। সব বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার ফুটের মধ্যে।
রানওয়েগুলো বর্তমানে যাত্রীবাহী বিমান পরিচালনায় অনুপযুক্ত। পর্যায়ক্রমে এই রানওয়েগুলোর দৈর্ঘ্য ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ফুটে উন্নীত করার টার্গেট আছে বেবিচকের। এছাড়া রানওয়ের পিসিএন ৩০ থেকে ৬০ ফুট করার টার্গেট আছে। তাহলে এটিআর কিংবা ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ মডেলের ছোট ছোট যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করা সম্ভব হবে।
জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ঈশ্বরদী বিমানবন্দর মেরামত ও সংস্কারের পর পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ কাজের ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে কাজ চলছে। এছাড়া সারা দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়ন ও উন্নয়নে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বেড়েছে। শিল্প কারখানার পাশাপাশি দেশব্যাপী পর্যটন খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। একের পর এক মেগা প্রকল্প, অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। এসব কারণে নতুন নতুন বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বাণিজ্যিকভাবে সফল বিমানবন্দরের জন্য দুটি শর্ত মানা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত যাত্রী এবং উড়োজাহাজ ওঠানামার জন্য দরকারি অবকাঠামো। যে ৬টি বিমানবন্দর চালুর টার্গেট রয়েছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত যাত্রী চাহিদা রয়েছে। কিন্তু দ্বিতীয়টির অভাবেই দেশের ১১টি আঞ্চলিক বিমানবন্দরের মধ্যে ৬টিতেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
আরও পড়ুন: তুরস্ক-সিরিয়া ভূমিকম্প: মৃত্যু ছাড়াল ২৮ হাজার
বর্তমানে কক্সবাজার, রাজশাহী, যশোর, সৈয়দপুর ও বরিশালের বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বাণিজ্যিকভাবে চালু রয়েছে। বেসরকারি বিমান সংস্থা-নভোএয়ার, ইউএস বাংলা, এয়ার অ্যাস্ট্রা, ভিস্তেরা এবং জাতীয় পতাকাবাহী বাংলাদেশ বিমান ঢাকা থেকে এসব গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করে।
আরও কয়েকটি বেসরকারি বিমান সংস্থা বর্তমানে ফ্লাইট অপারেশনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোর মতে, গত কয়েক বছরে ঢাকা থেকে পাঁচ জেলায় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদ উল আলম মনে করেন, সড়কে যানবাহনের চাপ প্রতিদিন বেড়ে চলেছে। এ কারণে বন্ধ থাকা অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বিমানবন্দরগুলো আবার চালু করা গেলে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো অবশ্যই ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তিনি বলেন, যাত্রী আছে এবং তারা বিমান ভ্রমণের জন্য খরচ করতেও প্রস্তুত। আমাদের প্রথম কাজই হবে এয়ারফিল্ডগুলোকে ব্যবসায় ফিরিয়ে আনা।