মিয়ানমারের ওপর অনেক দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলেও তাদের সাথে ঠিকই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- মোমেন্টস ডেস্ক
- প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৮ AM , আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩৮ AM

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সবাই সহানুভূতি দেখালেও তাদের দেশে ফেরাতে কেউ যথাযথ সহায়তা করছে না বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
গতকাল রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা সফররত গাম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীর আগমণ উপলক্ষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বঙ্গবন্ধু লেকচার সিরিজ বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারের ওপর অনেক দেশ নিষেধাজ্ঞা দিলেও তাদের সাথে ঠিকই ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে বিনিয়োগ করছে। বহুপক্ষীয়ভাবে এই ইস্যুর সমাধান করতে হবে।
ঢাকা সফররত গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও দেশটির প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত মামাদু তাঙ্গারা বলেন, গাম্বিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। সে কারণে আমরা এই ইস্যুতে অ্যাডভোকেসি করছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, ওআইসি, জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের সাথে একযোগে কাজ করছে গাম্বিয়া।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। এই গণহত্যায় জড়িতদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মামাদু বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিজেতে গাম্বিয়ার মামলা নিয়ে কোনো চ্যালেঞ্জ ছিল না। কেননা এটি আমাদের দেশের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানবাধিকার এবং শান্তিরক্ষায় গাম্বিয়া কার্যকরী ভূমিকা রাখতে চায়।
ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট প্রেক্ষাপট টেনে গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ ও ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে বিশ্বজুড়ে সঙ্কট চলছে। আর এ সঙ্কট থেকেই প্রমাণিত হয়, আমরা গ্লোবাল ভিলেজে রয়েছি। আমরা একযোগে এই সঙ্কট থেকে উত্তরণ চাই। সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যা নিয়ে গাম্বিয়ার আইসিজেতে মামলার প্রসঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি, এক সময় এই বিচার শেষ হবে। রায় আসবে। আন্তর্জাতিকভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি শেষ হবে। গাম্বিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে ভূমিকা বাংলাদেশ সবসময় এটা মনে রাখবে।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমির রেক্টর মাশফি বিনতে শামস।
বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জয়েন্ট পলিটিকাল ডিক্লারেশন সই করেছে বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া। দেশ দুটি জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যৌথভাবে কাজ করবে। ঢাকার পক্ষে চুক্তিটি সই করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন। অন্যদিকে গাম্বিয়ার পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মামাদু তাঙ্গারা চুক্তি সই করেন।
চুক্তি সই নিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমরা শান্তিরক্ষী বাহিনীর কো-ডিপ্লয়মেন্ট সংক্রান্ত চুক্তি সই করলাম। ভবিষ্যতে আমাদের যত শান্তিরক্ষী বাহিনী যাবে, সেগুলো বুঝে অনেকগুলোতে তাদের থেকে শান্তিরক্ষী নেবে।
গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ চুক্তির মাধ্যমে গাম্বিয়া, বাংলাদেশ ও জাতিসঙ্ঘের মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় সহযোগিতা হবে। দুই দেশই শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কাজ করে। এ চুক্তির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সাথে যৌথভাবে শান্তিরক্ষী কাজ করবে বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ই নভেম্বর আইসিজেতে মামলা দায়ের করে আফ্রিকার মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ গাম্বিয়া। অভিযোগে গাম্বিয়া বলেছে, রোহিঙ্গাদের উপর নৃশংস সামরিক অভিযান চালানোর মাধ্যমে ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদ লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার।